কৃষিতে বিশেষ করে বোরো ধান চাষে প্রবল আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে বিনা-২৫ ধান, যা মূলত বোরোর একটি নতুন উদ্ভাবিত জাত। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এই চাল ভারত ও পাকিস্তানের উন্নতমানের চাল বাসমতির চেয়েও সরু ও লম্বা। খেতেও সুস্বাদু ও সুগন্ধি।
উৎপাদনে সময় কম লাগে, ফলনো ভালো তদুপরি প্রচলিত বোরো ধানের আবাদের চেয়ে কম লাগে পানি ও সার। এবারই প্রথম মাঠপর্যায়ে আবাদে গিয়ে বাজিমাত করেছে বিনা-২৫ ধান। এবারের বোরো মৌসুমে অন্তত ৩৯৬ উপজেলায় আবাদ হয়েছে নতুন জাতটির। ভালো ফলন এবং দাম পেয়ে কৃষকো খুব খুশি।
ধানের এই নতুন প্রজাতিটি মূলত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ আট বছরের গবেষণার সুফল। বি-২৫ ধান মূলত ব্রি-২৯ এর বীজের একটি উন্নত ও আধুনিক সংস্করণ। এই গবেষণার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত বিনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাকিনা খানম।
উক্ত বিজ্ঞানীর মতে, বিনা-২৫-এর চাল সবচেয়ে লম্বা ও সরু বিধায় এখন থেকে অসাধু ব্যবসায়ী ও মিলাররা মোটা চাল কেটে সরু করে বাজারজাত করতে পারবেন না মিনিকেট নামে। ফলে ভোক্তারাও প্রতারিত হবেন না। চালের পুষ্টিগুণও অক্ষুণ্ণ থাকবে। ফলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে বিদেশ থেকে সরু ও উন্নতমানের চাল আমদানি করতে হবে না। বরং এই চাল বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ সুগম হবে।
বাংলাদেশে উৎপাদিত চালের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিংও সম্ভব হতে পারে। জমিতে পানি জমে থাকলে, ঝড়-বৃষ্টি অথবা বৈরী আবহাওয়ায় বিনা-২৫ ধান হেলে পড়লেও রোদ পেলেই পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসবে এবং ভালো ফলন দেবে। রোগ-ব্যাধি কম হওয়ায় এর বীজ সংরক্ষণের সুবিধাও পাওয়া যাবে। কৃষির বহুমুখীকরণসহ কৃষকদের ভালো ফলন ও লাভের মাধ্যমে কৃষিকাজে উৎসাহিত করা সম্ভব হবে। বিনা-২৫ আবাদে বিনামূল্যে বীজ ও প্রণোদনা দেয়া হবে আগামীতে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানী ও গবেষক দল বছর শেষে বড় একটি প্রবল আশা ও আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন দেশবাসীকে। আপাতত খাদ্য ঘাটতি কিংবা খাদ্য সংকটের আশঙ্কা নেই। বরং আমন ও বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য চাহিদা পূরণ করেও চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত উদ্বৃত্ত থাকবে ৩০ লাখ টন চাল।
দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চল জরিপ, মাঠপর্যায়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ, কৃষকের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি সর্বোপরি উপগ্রহচিত্র ব্যবহার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তারা। এর পেছনে ব্রির সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানী ও গবেষক দলের উচ্চফলনশীল ধানের বীজ উদ্ভাবন, খরা ও লবণাক্ত পানি সহিষ্ণু ধান বীজের ব্যবহার ইত্যাদির অবদানও কম নয়। নতুন জাত বিনা-২৫ ধানের আবাদ এক্ষেত্রে আরো আশার আলো হয়ে উঠতে পারে ভোক্তা ও কৃষকের জন্য।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য