সরকার ভোলার ‘ইলিশা-১’ গ্যাসক‚পকে ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছে। এখানে মজুত রয়েছে ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এই গ্যাসের বাজারমূল্য প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জ্বালানি সংকটের এ দুঃসময়ে দেশের জন্য এটি সুসংবাদ। দেশ যখন গ্যাসসহ জ্বালানি সংকটে ভুগছে তখন গ্যাস মজুতের সন্ধান আশা জাগানিয়া।
গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ গ্যাসক্ষেত্রের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। পাইপলাইন নির্মাণ করে এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে পাইপলাইন সম্পন্ন করতে চায় সরকার। পাইপলাইনে ভোলার গ্যাস সরবরাহ শুরু হতে ৩ বছর লাগবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। এ কারণে অল্প অল্প করে বিকল্প উপায়ে ঢাকায় আনা যায় কিনা সেটা দেখছে সরকার।
জানা গেছে, ভোলায় দুটি পুরোনো গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। একটি শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র এবং অপরটি হলো ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্র। ইলিশা-১ গ্যাসক্ষেত্র ভোলার তৃতীয় গ্যাসক্ষেত্র। ভোলার এই ৩টি গ্যাসক্ষেত্রের ৯টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। গত ৯ মার্চ ইলিশা-১ অনুসন্ধান কূপের খনন শুরু হয়। ১৪ এপ্রিল কূপের ৩ হাজার ৪৭৫ মিটার গভীরতায় খনন কাজ শেষে পৃথক নতুন একটি বাণিজ্যিকভাবে সফল গ্যাসের স্তর পাওয়া যায়।
সার্বিক ভূতাত্ত্বিক ও ভ‚পদার্থিক কারিগরি বিশ্লেষণ ও ডিএসটি (ড্রিল স্টেম টেস্ট) করে ইলিশা কূপ স্থাপনাকে দেশের নতুন গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করার জন্য বাপেক্সের ভূতাত্তিক বিভাগ মতামত দেয়।
এরপরই ইলিশা-১ দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হলো। সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (এসজিসিএল) তত্ত্বাবধানে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেডের মাধ্যমে গ্যাস কম্প্রেসড করে নিয়ে এসে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (টিজিটিডিসিএল) আওতাধীন এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সরবরাহ করা হবে।
এক্ষেত্রে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য হবে ৪৭.৬০ টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের চার্জ ৩০.৫০ টাকা, ফিড গ্যাসের মূল্য ১৭ টাকা এবং ডিমান্ড চার্জ ০.১০ টাকা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
দেশের গণমাধ্যমে গুরুত্বসহ প্রকাশিত হয়েছে এ খবরটি। ভোলার এই নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে সন্তোষজনক মজুত নিশ্চিত হলে দক্ষিণাঞ্চল শিল্প স্থাপনের জন্য আদর্শ স্থানে পরিণত হবে। গ্যাসের ওপর নির্ভর করে দ্বীপজেলা ভোলায় দেশি-বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগে উৎসাহী হবে। তাতে জেলায় গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে।
আর এসব শিল্পকারখানা হলে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি এখানে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়। ভোলায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার দেশের জন্য আশার আলো বয়ে আনুক এমন প্রত্যাশা করছি। আমাদের এ মুহূর্তে গ্যাসের সংকট, সেহেতু ভোলার গ্যাস আনা গেলে তা অনেক কাজে আসবে। উৎপাদিত গ্যাস দিনের পর দিন ফেলে রাখার কোনো মানেই হয় না।
ভোলায় গ্যাস সিএনজি করে আনা গেলে সেটি হবে একটি ভালো সিদ্ধান্ত। আমরা সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় দেখছি, অনেক আশা নিয়ে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের খবর জানানো হয়।
কিন্তু যে পরিমাণ মজুতের কথা বলা হয়, সে অনুপাতে উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। উত্তোলনের ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা আরো বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াও দরকার। মজুত এবং প্রাপ্তির ব্যবধান দূর করার দিকে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ দেয়া জরুরি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য