অর্থনীতি ও উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলার খবর পুরোনো। চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যবসা পরিচালনার নামে দেশের তফসিলি ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে হজম করে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
যেহেতু ব্যাংকিং খাতের টাকা জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের আমানত, তাই এ খাতের দুর্বৃত্তদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার অবকাশ নেই।
রাজধানীতে দুই দিনব্যাপী ‘ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ব্যাংক খাতে নৈতিকতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সুশাসন নিশ্চিত ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের শক্তিশালী ভূমিকাই খেলাপি ঋণ সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে।’
গত জানুয়ারিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে জানান, দেশের মোট ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫, আর শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকাও তুলে ধরেন তিনি। এ শীর্ষ খেলাপিদের কাছে মোট ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
তাই এটা বলা যায়, বর্তমানে ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা সমাধানে আমাদের ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রাজনৈতিকভাবেই পরিবর্তন আসে। এতে করে ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে কোটি কোটি টাকা লেনদেন ছাড়া এমডি ও সিইও নিয়োগ হয় না।
নিয়োগের পেছনে যারা টাকা ব্যয় করে তারা মূলত কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক দলের নেতারা আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকের পরিচালকরা অনেক সময় প্রভাব বিস্তার করে ঋণ অনুমোদন করে। অনেক সময় যথাযথ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান না করে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করা হয়।
এসব ঋণ সময়ের ব্যবধানে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও আমাদের সব উচ্ছাস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল।
বিষয়টি সবাইকে বিব্রত করে, এ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন মহলে এবং ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দারুণ অস্বস্তি রয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া অর্থ আত্মসাৎ সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্র ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়াই এর প্রমাণ। ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হলে প্রথমেই ঋণখেলাপিসহ প্রতিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-পরিচালকদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রয়োজনে তাদের সম্পদ জব্দ করে জনগণের শ্রম-ঘামের আমানত উদ্ধার করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে যেন রিকভারি এজেন্টরা জিম্মি হয়ে না পড়ে সেদিকেও গভীর মনোযোগ দিতে হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য