এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার পিপিএম: অজানাকে জানতে চাওয়া কিংবা না দেখাকে দেখতে পাওয়ার অন্তহীন তাড়না থেকে জ্ঞান আহরণের লক্ষ্যে জ্ঞানপিপাসুদের মূর্ত কিংবা বিমূর্ত ক্যানভাসে প্রতিচ্ছবি তৈরি করবার প্রচেষ্টায় যেন সৃষ্টি তার স্রষ্টাকে অবিরাম খুঁজে পেতে চায়। যে কোনো পাঠক প্রতিটি সুখপাঠ্য গ্রন্থে তার জানার বাইরে কোনো অজানা জ্ঞানকে নিজের উপলব্ধির ভাণ্ডারে সংযুক্ত করার প্রয়াস করেন। এ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে পাঠকের জ্ঞানচর্চা প্রগতিশীলতা লাভ করে এবং পরিপক্কতা অর্জনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পরম প্রাপ্তির সলিল সুধায় নিজের তৃষ্ণা নিবারণ করে থাকেন। তিনিই সৃষ্টিকর্তার বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট মানুষোত্তম, যাকে বিধাতা জ্ঞানসৃজনের সক্ষমতা দিয়েছেন, যার সৃজিত জ্ঞানই পাঠকের জ্ঞান লাভের উপজীব্য হয়। এমনি একজন সৃজনশীল জ্ঞানসাধকের সৃজিত জ্ঞানের সমারোহে রচিত হয়েছে ‘এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’ শিরোনামের গ্রন্থটি, লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলার সূর্যসন্তান জনাব মো. সাহাবুদ্দিন চুপপু।
কিছু কিছু প্রকাশ স্বমহিমায় তথাকথিত সাহিত্যমানকে ছাড়িয়ে অনন্য এক মাত্রা লাভ করে। কিছু লিখনী সৃষ্টির সহজাত দক্ষতায় হয়ে ওঠে কোনো অবিনশ্বর আত্মকথার স্বরূপ। ঠিক তেমনি করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের দ্বাবিংশতিতম মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মো. সাহাবুদ্দিন চুপপু মহোদয়ের সদ্যপ্রকাশিত 'এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ' গ্রন্থটি যেন বাংলার সাত দশকের ধারাবাহিক ইতিহাসের একটি স্বলিখিত প্রমাণপত্র। এখানে লেখক সাধারণ কোনো সাহিত্যিক নন। বরং, তিনি নিজেই ইতিহাসের সাক্ষী, বাংলার অর্ধশতাব্দীর আত্মকথায় সক্রিয় এক কুশীলব।
একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে গ্রন্থটি জাতির পিতার একান্ত স্নেহাশীষধন্য জনাব মো. সাহাবুদ্দিন চুপপু মহোদয়ের বর্ণীল সংগ্রামী জীবনেরই এক দৃশ্যমান ক্যানভাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিতে উৎসর্গ করা এই গ্রন্থের বহুল তথ্যসমৃদ্ধ বিভিন্ন নিবন্ধে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের যে নিখুঁত চিত্রকল্প ফুঁটে উঠেছে, তা ইতিহাসের পরতে পরতে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করে শেকড় থেকে শিখরে ওঠা একজন মানুষের জীবন, সংগ্রাম ও আদর্শের প্রতিলিপি। তিনি নিজেই এই ইতিহাসের সাক্ষী, নিজেই এই ইতিহাসের অংশীদার।
গ্রন্থের শুরুতে স্বাধীনতার অর্ধশতবার্ষিকীর প্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রযাত্রার লেখচিত্রের প্রারম্ভবিন্দু রূপে তিনি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সেই যুগান্তকারী ভাষণের মুহূর্তকে চিহ্নিত করেছেন।
বলা বাহুল্য, মূলত সেই দিনেই জাত ধর্ম নির্বিশেষে সাত কোটি বাঙালির আদর্শকে স্বাধীনতার স্বপ্নে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন জাতির পিতা। আর, এটিই আমাদের ১৬ ডিসেম্বরের পেছনের গল্প। সেখান থেকেই উত্তরণ বাংলাদেশের। নিবন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি উদ্ধৃতি উল্ল্যেখ করা হয়—‘কী পেলাম, কী পেলাম না, সে হিসাব মিলাতে আমি আসিনি। কে আমাকে রিকোগনাইজ করল, আর কে করল না, সে হিসাব আমার নেই। একটাই হিসাব, এই বাংলাদেশের মানুষ ও তাদের পরিবর্তনে কিছু করতে পারলাম কি না, সেটাই আমার কাছে বড়।’
সত্যিকার অর্থে এই উক্তির তাৎপর্য হিসেবে মাত্র এক যুগের ব্যবধানে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়া, অর্থনীতিতে দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচ দেশের তালিকায় স্থান করে নেওয়া, এমডিজি বাস্তবায়ন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প, দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি সহ সুবিশাল কর্মযজ্ঞের অসংখ্য উদাহরণ যেন আত্মজার হাত ধরে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের প্রতিচ্ছবি। এমন কি, মহামারি করোনা যখন বিশ্বত্রাসরূপে একের পর এক উন্নত রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে গেছে, তখন করোনাযুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য শেখ হাসিনাকে পৃথিবী দেখেছে অপার বিষ্ময়ে। হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি আজ বিশ্বদরবারে স্বমহিমায় প্রকাশিত। ঠিক এভাবেই একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠাকে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন হিসেবে চিহ্নিত করে বিগত ৫০ বছরের সমস্ত প্রাপ্তিকে তিনি জাতির পিতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করেছেন।
‘একটি কবিতা লেখা হবে,
তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা
বসে আছে ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে,
কখন আসবে কবি?’
নির্মলেন্দু গুণের কবিতায় ৭ মার্চের মহাভাষণ যে ব্যপ্তিতে প্রকাশিত হয়েছে, তারই যেন গদ্যরূপের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক মো. শাহাবুদ্দিন চুপপুর কলমে। একজন প্রগতিশীল ছাত্রনেতা হিসেবে সে সময়ের তরুণ সাহাবুদ্দিনের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাঙালির শত বছরের বঞ্চনার ইতিহাস এবং আশা-প্রত্যাশা ও অধিকার আদায়ের গল্প। তাঁর মতে ভাষণটি মানবিক বোধের শ্রেষ্ঠতম প্রকাশ, গণতান্ত্রিক চেতনায় উজ্জ্বল এবং নিপীড়িত মানুষের স্বাধিকার অর্জনের প্রামাণ্য দলিল। গ্রন্থের 'দাবায়ে রাখতে পারবা না' শীর্ষক নিবন্ধে তিনি এই ভাষণটিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা সম্পদ ও শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ হিসাবে উল্লেখ করে ৭ মার্চের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট, অনিবার্যতা, পূর্বাপর সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কর্মকাণ্ডের তথ্যসমৃদ্ধ ভাববিশ্লেষণ অত্যন্ত সাবলীল ভাবে তুলে ধরেছেন।
জাতির পিতার ভাবাদর্শকে কতটা আত্মস্থ করে নিলে কেউ লিখতে পারে—‘স্বাধীনতার এই ঘোষণাকে যদি আমরা চিত্রে রূপায়ণ করি, তবে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের উত্তাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমার চোখে এভাবেই ভেসে ওঠে- মাতৃভূমি আজ শত্রু দ্বারা আক্রান্ত। দেশ স্বাধীন করার বাসনা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। রণক্ষেত্রও প্রস্তুত। সৈন্যরা সমবেত রণভূমিতে। তাদের সামনে প্রতিপক্ষের দুর্গ। সেই দুর্গ ভেদ করে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনতে হবে। অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে গেছে সৈন্যরা। সবাই তাকিয়ে আছে রাজন্যের ইশারার দিকে। অপেক্ষা শুধু অন্তিম নির্দেশের। পুরো এই প্রক্রিয়াকে প্রস্তুত করার অন্তিম নির্দেশই ছিল ৭ মার্চ। অস্ত্রবিহীন, যুদ্ধজ্ঞানবিহীন একটি সহজ সরল জাতির মনে ‘স্বাধীনতা’ নামক ক্ষুধা জাগিয়ে তোলার নাম ৭ মার্চ। মাটির মতই এদেশের মানুষের মন। সেই উর্বর মনে স্বাধীনতার বীজ বপন করার নামই ৭ মার্চ।’
লেখকের বর্ণাঢ্য সংগ্রামী জীবনের অন্যতম একটি অধ্যায় অতিবাহিত হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের গুরু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ দীক্ষার চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমস্ত ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই ও প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সীমানা ছাড়িয়ে আওয়ামী লীগের গৌরব, সাফল্য ও সংগ্রামের সাত দশক ব্যাপ্তিকালের একটি অনবদ্য পর্যাক্রমিক চিত্ররূপে তিনি সাজিয়েছেন ‘আওয়ামী লীগের সাতকাহন’ নিবন্ধটি। তিনি বলেছেন—ভগীরথীর তীরে ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন বাংলার স্বাধীন সূর্য অস্তমিত হওয়ার ঠিক ১৯২ বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিব ও তাঁদের সহযোদ্ধাদের হাত ধরে 'পতন দিনে উত্থান' সূত্রে শূন্য থেকে যে দলটির পদযাত্রা শুরু হয়, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ সেই শূন্যের সুফলই ভোগ করছেন। বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ- বাঙালির অভিধানে এ শব্দগুলো সমার্থক। অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও মানবকল্যাণকামী এ রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাকালীন মূলমন্ত্র হলো জনগণের মুক্তি। আওয়ামী লীগ মানেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূলধারা।
সংক্ষিপ্ত ও সুখপাঠ্য এই নিবন্ধটি আগামীর প্রতিটি প্রজন্মের কাছে আওয়ামী লীগ সৃষ্টির উদ্দেশ্য, সংগ্রাম ও গৌরবময় ইতিহাসের অমর একটি প্রতিবেদন রূপে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সমাদৃত হবে বলেই পাঠক হিসেবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ব্যক্তিজীবনে বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছে থেকে দেখা ও স্মৃতিচারণার একটি দৃশ্যের বর্ণনায় লেখক উল্লেখ করেছেন—স্বাধীনতার পর কয়েকবার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্মুখ সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল আমার। যার একটি ঘটনা আজও আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। সালটা ১৯৭২, ফেব্রুয়ারি মাস। বন্যাকবলিত মানুষকে বাঁচাতে পাবনার কাশিনাথপুর/নগরবাড়িতে মুজিব বাঁধ উদ্বোধন করতে আসেন জাতির জনক। আমি তখন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। যথারীতি জনসভার আয়োজন হলো। স্বগত বক্তব্যের দায়িত্ব পড়ল আমার ওপর। বক্তৃতা দিলাম। ডায়াস থেকে মুখ যখন ঘুরিয়ে চলে যেতে উদ্যত হয়েছি, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু আমার হাত ধরে ফেললেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দাঁড়িয়ে গিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কপালে চুমু দিয়ে বললেন—‘তুই তো ভালো বলিস’। বঙ্গবন্ধুর বুকে লেপ্টে আছি, কি বলব, কী বলা উচিত, বুঝতে পারছিলাম না। মুহূর্তের জন্য হতবিহবল হয়ে গেলাম। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম জাতির জনকের দিকে।
এই দৃশ্যপট পাঠক হিসেবে আমার হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কেটে যায়। ভাবনার স্তরকে জাগতিক বিচরণ ছেড়ে মহাজাগতিক ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে বাধ্য করে। মাত্র ১৮ মিনিটের বক্তৃতায় যিনি সাত কোটি মানুষকে এক সুতোয় গেঁথেছিলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষকে রক্তক্ষয়ী মহাযুদ্ধে নামিয়েছিলেন, সেই মানুষটি একজন নিতান্তই স্বল্পশ্রুত এক তরুণের ভাষণে এমন করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন—এটি কোনো সাধারণ কথা নয়। বস্তুজগতের লৌকিক দৃষ্টির আড়ালে বঙ্গবন্ধু সেদিন তাঁর অলৌকিক ত্রিকালদর্শী দৃষ্টিতে হয়তো তরুণ সাহাবুদ্দিনের মধ্যে দেখেছিলেন নিজেরই কোনো প্রতিরূপ! হয়তো সেদিনই তিনি মহাচেতনায় উপলব্ধি করেছিলেন সেই সংগ্রামী তরুণের ভবিষ্যৎ, যে কি না কালের বহমানতায় একদিন নিজ কর্মগুণে অভিষিক্ত হবে জাতির কর্ণধারের পদমর্যাদায়। সেদিনের সেই ইঙ্গিতটিই হয়ত তাঁর উপযুক্ত কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আজ এভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতিহাসে এমন ঘটনার উদাহরণ দুষ্প্রাপ্য নয়। ঠিক এমনটাই দেখা গিয়েছে বাংলাসাহিত্যের প্রবাদপুরুষ মহামুনিষী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্ষেত্রেও। নিতান্তই কিশোরী অবস্থায় শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী যখন শান্তিনিকেতনে অধ্যয়ন করতে আসেন, তখনই দিব্যদৃষ্টিতে ইন্দিরার মধ্যে অপার সম্ভাবনার আলো দেখতে পান কবিগুরু। অপত্যস্নেহে নামকরণ করেন 'প্রিয়দর্শিনী'। ইন্দিরা পরিচিত হন ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরু নামে। এই দুটি ঘটনা বাহ্যিক দৃষ্টিতে কাকতালীয় মনে হলেও, লৌকিক বোধশক্তির বাইরে একটি দৈব সংযোগের সম্ভাবনা অজ্ঞাতরূপেই থেকে যায়।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সম্পূর্ণরূপে রক্তে ও চেতনায় ধারণ করে যোগ্যতম উত্তরসূরি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রকৃত অর্থেই উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সার্থক রূপকার, এই অবিসংবাদিত বিষয়টি গ্রন্থে যুক্তিনিষ্ঠভাবে বারবার প্রকাশিত হয়েছে।
মূলত, বাংলার উন্নয়নের এই জোয়ারে লেখক স্বয়ং নিজেই নেত্রীর একজন অন্যতম সহযোদ্ধা। তাই বিভিন্ন নিবন্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বদেশ বির্নিমানকালের উন্নয়নমূলক যাবতীয় কর্মযজ্ঞের নিখুঁত তথ্য ও উপাত্ত গাণিতিক ব্যখ্যাসহ এতটা সাবলীলভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। সেই দৃষ্টকোন থেকে গ্রন্থটি অবশ্যই বাংলাদেশের সার্বিক উত্তরণের একটি উৎকৃষ্ঠ লেখচিত্রের মর্যাদা লাভ করার যৌক্তিক দাবি রাখে।
সপরিবারে নির্মমভাবে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর প্রায় সব প্রেক্ষাপট তিনি গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। তদন্ত কমিশন গঠন করে টার্মস অব রেফারেন্স অনুযায়ী কাজ করে এ ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন করেছেন তিনি। দেশবাসীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন- সেদিন ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেনি, তার সঙ্গে তারা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকেও হত্যা করতে চেয়েছিল।
বিভিন্ন সময়ে বহু পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাঁর একুশটি বহুমাত্রিক নিবন্ধের সংকলনে প্রকাশিত এই গ্রন্থের পরিশিষ্ট অংশটি সাজানো হয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ১২ জুন, ২০২২ তারিখে প্রচারিত 'কীর্তিমানের গল্পকথা' অনুষ্ঠানে জনাব সাজ্জাদ কাদিরকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন, বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. এম আবদুল আলীমকে দেওয়া ‘ভুট্টা আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী পাবনার প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম’ ও ‘আমরা যুদ্ধ করেছি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও আহবানে’ শীর্ষক দুটি সাক্ষাৎকার এবং ড. আলীমের লেখা—‘মো. সাহাবুদ্দিন চুপপু: সংগ্রাম, চিন্তা ও রাজনৈতিক আদর্শ’ প্রবন্ধটি দিয়ে। সংরক্ষণে রাখার মতো অনন্য এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন আগামী প্রকাশনী।
বিভিন্ন সময়ে লেখা অনুস্মৃতি, কলাম ও সাক্ষাৎকারগুলো এক মলাটে স্থান দিতে গিয়ে তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিশেষ উক্তি স্মরণ করেছেন—‘জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা।’ তাঁর এই উপলব্ধির আশীর্বাদস্বরূপ আমরা এই অমূল্য গ্রন্থটি পেয়েছি। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত, সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শের অনুপ্রেরণায় উদ্ভূত যাবতীয় অভিজ্ঞতার নির্যাস দিয়ে সাজানো অপূর্ব এই গ্রন্থটি নিঃসন্দেহে বাংলার পাঠকদের জ্ঞানসম্ভারকে সমৃদ্ধ করবে।
বিনত, গুনমুগ্ধ পাঠক— এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার পিপিএম
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য