ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক বাংলাদেশের (এবিবি) আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে দেশের খেলাপি ঋণ সম্পর্কে যেসব তথ্য পরিসংখ্যান উঠে এসেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
এবিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে। গত এক দশকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ব্যাংকগুলোর হাত দিয়েই বিতরিত হয়েছে এই ঋণ। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাই এখন ব্যাংক খাতের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে খেলাপি ঋণ আদায় ও নিয়ন্ত্রণ করা এককভাবে তফসিলি ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার সরকারের সদিচ্ছা ও সামাজিক প্রতিশ্রুতি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে বাস্তবিক ও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। সরকার বরং বিভিন্ন সময়ে ঋণখেলাপিদের নানা সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দিয়েছে। আর সেসব বাস্তবায়নে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো। খেলাপি ঋণের বড় একটি অংশ বিদেশে পাচারের অভিযোগও আছে।
সে অবস্থায় খেলাপি ঋণ আদায়সহ ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা সর্বোপরি ঋণখেলাপিদের ধরার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংকগুলোর হাতে পুরো ক্ষমতা থাকা আবশ্যক। এর পাশাপাশি অর্থঋণ আদালতে বিচারক ও বেঞ্চ বাড়ানোসহ আইন কাঠামো কঠোর করতে হবে। প্রয়োজনে গঠন করতে হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
বিশেষ ব্যাংক কমিশন গঠনও সময়ের দাবি। তাহলে ঋণখেলাপি ও প্রভাবশালীরা ছাড় পাবে না।
দুর্নীতি দমন কমিশন মাঝে মধ্যে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণের অভাবে তা থেকে যায় অগোচরে। বিএনপির আমলে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম এবং বর্তমান সরকারের আমলে কানাডায় বেগমপাড়ার কথা বহুশ্রুত।
সাবেক প্রয়াত এক অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, কিছু আমলাও বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত।
বর্তমান অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের নাম ও তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কার্যত কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই বললেই চলে। কেননা, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের অভাব প্রকট।
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রপ্তানির মূল্য কম দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েসিং) দেখিয়ে এর মাধ্যমে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ তো আছেই। এর বাইরে রয়েছে হুন্ডি ব্যবসায়ী, স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালান, মানবপাচার বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচার ইত্যাদি।
বিদেশে যেভাবে এবং যে পদ্ধতিতেই অর্থ পাচার করা হোক না কেন, সেদিকে নিয়মিত নজরদারি করতে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো, দুর্নীতি দমন কমিশনও এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য