-->

নির্বাচন ছাড়া বিএনপির উপায় কী?

ওবায়দুল কবির
নির্বাচন ছাড়া বিএনপির উপায় কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পর বিএনপির আর নির্বাচন থেকে দূরে থাকার সুযোগ নেই। বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন করে মাঠের বাইরে থাকে তবে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন করেও ক্ষমতায় যাওয়ার চ্যালেঞ্জ সহজ হবে। এখন বিএনপিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তাদের ভবিষ্যতের পথ হবে কোনটি?

 

কোনো একটি ঘোষণা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপি নেতাকর্মীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন এবং বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের পরই তারা এমন একটি প্রত্যাশায় দিন গুনছিলেন। অবশেষে সেই ঘোষণা এসেছে কিন্ত উচ্ছাসে করতে পারছে না দলটি।

 

এমনকি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কোনো কোনো নেতা এই ঘোষণাকে রাষ্ট্রের জন্য অবমাননাকর বলেও উল্লেখ করে বসেন। পরে অবশ্য আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণাকে স্বাগত জানান। তারা সরকারি দলের ওপর অনাগত ভিসা স্যাংশনের জন্যও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলে দাবি জানান।

 

বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায় তবে কীভাবে ক্ষমতাসীনদের ওপর এই ভিসা স্যাংশন আসতে পারে এই ব্যাখ্যা অবশ্য তাদের কাছে নেই। ক্ষমতাসীনদের ওপর এমন শাস্তি আসতে হলে বিএনপিকে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে আসতে হবে।

 

কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো কথা উল্লেখ নেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ ধরনের দাবির পক্ষে কোনো রাষ্ট্রই সমর্থন জানাতে পারবে না। বিএনপি এখন নির্বাচন বর্জন করে প্রতিহত করতে চাইলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা স্যাংশনে পড়ে যাবেন।

 

সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায়। নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েই তারা সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহব্বান জানাচ্ছে।

 

ক্ষমতাসীনরা কখনো বলেনি, তারা কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচন করতে চায়। বিএনপি তাদের এই আশ্বাস আমলে নিচ্ছে না। তারা বলছে, ২০১৮ সালে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনে তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ দিতে পারেনি। এ জন্যই তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি। সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সুযোগ নেই। বিদেশি কোনো রাষ্ট্র অসাংবিধানিক এমন দাবির প্রতি সমর্থন জানাতে পারবে না।

 

এমন একটি পরিস্থিতিতে বিএনপির অনুপস্থিতিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার আবার ক্ষমতায় গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন তাদের ওপর পড়ার কারণ থাকবে না।

 

২০২৩ সালের ২৪ মে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিংক্রেন বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছেন। এই নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের অবাধ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারীদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেয়া হবে না। শুধু তাই নয়, ভিসা দেয়া হবে না বাধাদানকারীদের পতি, পত্নী এবং ছেলেমেয়েদেরও।

 

পরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে ঘোষণাটি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, যেসব কর্মকান্ড গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচালের আওতায় পড়বে তার মধ্যে আছে- ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার প্রয়োগ করা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার জন্য সহিংসতাকে কাজে লাগানো এবং এমন কোনো পদক্ষেপ; যার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা সংবাদমাধ্যমকে তাদের মত প্রচার থেকে বিরত রাখা।

 

বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ২১২ (এ) (৩) (সি) (৩সি) ধারাবলে এই নতুন নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, গত ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্র নাইজিরিয়ার জন্যও একই ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। সেখানেও বলা হয়েছে, নাইজেরিয়ায় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারীদেরও ভিসা দেয়া হবে না।

 

বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, ব্রিংকেন সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই সম্ভাব্য বাধাদানকারীদের তালিকায় রেখেছেন। এই ঘোষণাটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু একটি টিভি চ্যানেলে বলেন, বাংলাদেশের কোনো দলকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না।

 

অর্থাৎ কারও বন্ধু হয়ে সুবিধা পাইয়ে দেয়ার জন্য এই ঘোষণা দেয়া হয়নি। রাষ্ট্রের বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক স্বার্থেই এই নতুন ভিসানীতি গ্রহণ করা হয়েছে। পরে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বসে এই নীতির ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

 

এ ঘোষণার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটা নিষেধাজ্ঞা নয়। এতে বিএনপিরই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।

 

তারা নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের সময় যে সহিংসতা চালিয়েছে, সেটার জন্যও ভিসা বিধিনিষেধ আসতে পারে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাই, এই ভিসানীতিতে সরকারের উদ্বেগের কিছু নেই।’

 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তারা বলেছে নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা নয়। আমাদেরও কথা এটাই এই নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদের অবশ্যই প্রতিহত করা হবে।’

 

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক এবং সাবেক ডাকসুর ভিপি খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দিয়েছে তা দেশের আগামী নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ভিসাসহ যেসব বিষয় আমাদের সামনে এসেছে, এগুলো জাতির জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর ও লজ্জার।’

 

খায়রুল কবির খোকন ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তার সৎ মতামত দিয়েছেন। বিএনপি প্রকাশ্যে অবশ্য এমন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে সরকারের প্রতি ঠেলে দিতে চাইছেন। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য তারা প্রায়ই বিদেশিদের দ্বারস্থ হয়েছেন।

 

এমনকি অর্থ খরচ করে যুক্তরাষ্ট্রে লবিষ্ট নিয়োগের সংবাদও সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র যা বলবে, তাই তাদের সমর্থন জানাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুযায়ী, তাদের এখন আর নির্বাচন প্রতিহত করার সুযোগ নেই। নির্বাচন বর্জন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। তারা এই অধিকার প্রয়োগ করে চুপচাপ বসে থাকলে সমস্যা নেই। নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইলেই যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনে পড়তে হবে।

 

প্রশ্ন হচ্ছে, এখন তাহলে বিএনপি কি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাবে? নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন নিয়ে মাঠে থাকবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য ঘোষণা দিয়েছেন, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদায় করেই নির্বাচনে যেতে চায়। এজন্য আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট।

 

নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট করে বলেন, বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই দেশটির লক্ষ্য। আগামী নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নেবে কি না তা বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়।

 

এ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বক্তব্য নেই। অবাধ ও সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র একটি ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশ সরকার এটিকে স্বাগত জানিয়েছে। বিরোধী দল কোনো সহিংসতা করলে এই নীতির আওতায় তাদের বিরুদ্ধেও ভিসা স্যাংশন হতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানান মিলার।

 

বিএনপি নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা স্যাংশনের বিষয়টি অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তারেক রহমান এই স্যাংশনের আওতায় ছিলেন। ২০০৮ সালে চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘ভয়ঙ্কর রাজনীতিক’ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না দেয়ার জন্য ওয়াশিংটনকে সুপারিশ করেছিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস।

 

বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি করায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে উল্লেখ করে ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক গোপন বার্তায় এই সুপারিশ করা হয়েছিল। আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকস্ এই বার্তাটি ফাঁস করে দিয়েছিল। তখন এটি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনাও হয়।

 

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের গোপন বার্তায় বলা হয়, ‘দূতাবাস মনে করে, রাজনৈতিকভাবে সংঘটিত ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতির জন্য তারেক দায়ী। তার দুর্নীতির কারণে মার্কিন ঘোষণাপত্রের ৪ নম্বর ধারায় বর্ণিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্য বিনষ্ট হওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’ এই সুপারিশে অবশ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ তারেক রহমানের পরিবারের কেউ ছিলেন না। তারেক রহমান আর কোনোদিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টাও করেননি।

 

সেই সময় ভিসা স্যাংশনে ছিলেন তারেক রহমান একা। এবার দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধা দিলে তার গোটা পরিবার এই স্যাংশনের আওতায় আসবে। শুধু তাই নয়, নির্বাচন প্রতিহত করতে মাঠে আন্দোলনকারীদেরও আওতায় আনা হবে এই নীতির তালিকায়। ইতোমধ্যে যাদের ভিসা রয়েছে তাদের ভিসাও বাতিল করা হবে।

 

এ ছাড়া নির্বাচনে না এলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নিবন্ধনও হুমকির মুখে পড়বে। সবকিছু মিলিয়ে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে না আসার বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। একই সঙ্গে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নেরও সুযোগ এসেছে। সরকার অবশ্য গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তাদের অঙ্গীকারের প্রকাশ ঘটিয়েছে।

 

বিএনপি নির্বাচনে এলে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে চান। তিনি বারবার বলেছেন, ‘গত পনেরো বছর দেশের জন্য কাজ করেছি। উন্নয়নের সুফল পৌঁছেছে দেশের প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায়। তাদের আর খাওয়া, পরার অভাব নেই। দেশের প্রতিটি নাগরিক উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারছে। মানুষ আবারো আমাদের পক্ষে রায় দিলে আমরা তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। এরপরও যদি আমাদের বিপক্ষে রায় দেয় তবে হাসি মুখে মেনে নেব।’

 

প্রধানমন্ত্রীর এই আন্তরিক ঘোষণা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পর বিএনপির আর নির্বাচন থেকে দূরে থাকার সুযোগ নেই। বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন করে মাঠের বাইরে থাকে তবে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন করেও ক্ষমতায় যাওয়ার চ্যালেঞ্জ সহজ হবে। এখন বিএনপিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের ভবিষ্যতের পথ হবে কোনটি।

 

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version