-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

নদী কারো একক সম্পত্তি নয়

নদী কারো একক সম্পত্তি নয়

নদী কারো একক সম্পত্তি নয়। নদীর মালিকানা একমাত্র রাষ্ট্রের। নদী বা জলমহাল ইজারা দেয়ার রাষ্ট্রীয় আইন আছে। স্বাধীনতার পর থেকে ‘জাল যার জলা তার’ নীতি নিয়ে দেশের জলমহালগুলো ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

 

বর্তমান সরকার এই নীতিকে আরো সম্প্রসারিত করে আইনি রূপ দিয়েছে, যা ‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯’ আইন হিসেবে পরিচিত।

 

কিন্তু বাগেরহাটের চিত্রা নদীকে বদ্ধ জলাশয় হিসেবে ইজারা নেয়া হয়েছে। ফলে প্রকৃত জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি পত্রিকায় ‘চিত্রা নদীকে বদ্ধ জলাশয় হিসেবে ইজারা, ক্ষতিতে জেলেরা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

 

দক্ষিণবঙ্গের প্রধান নদী চিত্রা। নদীটি বাগেরহাটসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা দিয়েও প্রবাহিত হয়েছে। ইজারাদার নিজের সুবিধামতো নদী ও নদীর শাখা খালগুলো দখলে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে সাব লিজের মাধ্যমে যত্রতত্রভাবে মাছ আহরণ করায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

 

সবশেষ চিত্রা নদী জলমহাল ইজারা নেয় বাগেরহাট সদরের কুলিয়াদাইড় মৎস্যজীবী সমিতি লিমিটেড। কিন্তু সমিতির সভাপতি চুক্তির তোয়াক্কা না করে সাবলিজ দিয়ে নদীতে মাছ শিকার করছেন।

 

সরকার দেশের জলমহালগুলো প্রকৃত মৎস্যজীবীদের কাছে দিতে, রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে আইনটি করেছে। এ আইনের মাধ্যমে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জলমহাল ইজারা দেয়ার কথা। যে প্রক্রিয়ায় জলমহাল বন্দোবস্ত দেয়া হয়, সেই পদ্ধতিতে মৎস্যজীবী ছাড়া অন্য কেউ ইজারা পাওয়ার কথা নয়।

 

তারপরও অনেক ক্ষেত্রে ওপরমহলের নির্দেশে অথবা ক্ষমতার দাপটে জলমহাল ক্ষমতাবানেরাই ভোগ করে চলেছেন। যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি এ কাজ করেন, তাদের স্থানীয় পেটোয়া বাহিনী থাকে। তাদের ভয়েও অনেকে কথা বলতে পারেন না।

 

‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি-২০০৯’ নীতিমালার ২ নম্বর ধারার ‘খ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো সমিতিতে যদি এমন কোনো সদস্য থাকেন, যিনি প্রকৃত মৎস্যজীবী নন, তবে সেই সমিতি কোনো সরকারি জলমহাল বন্দোবস্ত পাওয়ার যোগ্য হবে না।’

 

এই ধারারই ‘ক’ অনুচ্ছেদে প্রকৃত মৎস্যজীবীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যিনি প্রাকৃতিক উৎস হতে মাছ শিকার এবং বিক্রয় করেই প্রধানত জীবিকা নির্বাহ করেন, তিনিই প্রকৃত মৎস্যজীবী বলে গণ্য হবেন।’

 

একটি নদীর আশপাশের গ্রামে শত শত মানুষ বসবাস করে। তারা নদী দ্বারা উপকৃত হয়। জেলেরা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন ইজারা দেয়ার কারণে নদীপারের বাসিন্দারা নিজেদের প্রয়োজনে মাছ ধরতে এবং অন্য কাজে নদী ব্যবহার করতে পারবে না।

 

আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারের জন্য আইন আছে। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে, আইনের তোয়াক্কা না করে এবং কিছু ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জলমহাল ইজারা নেয়া হয়। চিত্রা নদীর ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। সরকারি নদী প্রকৃত মৎস্যজীবীদের কাছে ইজারা দেয়ার দাবিই বরং ন্যায়সংগত।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version