খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বড় ডাঙ্গা গ্রাম এখন ‘বড় ডাঙ্গা মডেল’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এই পরিচিতি এসেছে চিংড়ি চাষ করে। মূলত মৎস্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ কাজের সফলতার সর্বশেষ সাফল্য ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ।
ফলে অধিকাংশ মৎস্যচাষি সনাতন পদ্ধতির বদলে, ক্লাস্টার পদ্ধতিতে ঝুঁকে পড়ছেন। তাতে চিংড়ি উৎপাদন যেমন বাড়ছে, তেমনি পাওয়া যাচ্ছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাছ। একই সঙ্গে পরিবেশেরও কোনো ধরনের ক্ষতি হচ্ছে না।
আগে সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করার ফলে উৎপাদন যেমন কম হচ্ছিল, তেমনি নিয়মিতভাবেই লেগে থাকত রোগবালাই। যে কারণে চিংড়ি চাষে লোকসানের মুখে পড়তেন চাষিরা। ক্রমেই তাদের মধ্যে চিংড়ি চাষে অনীহা বাড়তে থাকে। এমন অবস্থাতেই এগিয়ে আসে উপজেলা মৎস্য দপ্তর। দায়িত্বপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা এলাকার ২৫ জন চাষিকে নিয়ে তৈরি করেন ক্লাস্টার বা দল।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত এসটিডিএফ প্রকল্পের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ফিশের সহযোগিতায় এই অঞ্চলের ২টি ক্লাস্টারে ৫০ জন চাষিকে একত্র করে, সনাতন পদ্ধতির বদলে আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতির সমন্বয়ে লাভজনক এবং নিরাপদ চিংড়ি চাষের কলাকৌশল শেখানো হয়। ফলে অল্পদিনেই চাষিরা দেখতে পান লাভের মুখ। ক্রমেই তাদের মধ্যে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দেয়।
অন্যদিকে, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতাধীন গঠিত ৩০০ ক্লাস্টারের সাড়ে সাত হাজার চিংড়ি চাষি বিপর্যয়ের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। ‘চিংড়ি চাষের আশা ক্লাস্টার পদ্ধতি’ সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, সনাতন পদ্ধতিতে বেশ কয়েক বছর ধরে চিংড়ি চাষে লাভের মুখ দেখতে পারছেন না অধিকাংশ চাষি।
জলবায়ুর প্রভাব, রোগবালাইসহ নানাবিধ কারণে উৎপাদনের আগে চিংড়ি মারা যাওয়ায় ক্রমাগত লোকসানে আর্থিক বিপর্যয়ে পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ চাষি। চিংড়ি চাষিরা যখন হতাশায় দিন পার করছে, ঠিক তখনই মৎস্য অধিদপ্তর তাদের সংগঠিত করে দেখিয়েছে নতুন সম্ভাবনা ও আশার আলো।
প্রকাশিত সংবাদে আরো বলা হয়েছে, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাছচাষিদের সুসংগঠিত করে ৩০০ ক্লাস্টারকে প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস্টারে রয়েছে ২৫টি ঘের। যেসব ঘেরের আয়তন ৩৩ থেকে ১৫০ শতক।
প্রকল্পের নির্দেশনা অনুযায়ী, ঘের প্রস্তুতির পর ক্লাস্টারগুলোকে ম্যাচিং গ্র্যান্ট (আর্থিক অনুদান) পাওয়ার জন্য আবেদন করতে বলা হয়। ক্লাস্টারভুক্ত চাষিদের একর (১০০ শতক) প্রতি অফেরতযোগ্য ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেয়া হবে।
যে অনুদান দিয়ে তারা খনন ও রাস্তা নির্মাণ বাদে পোনা মজুদ, ঘের প্রস্তুত, গুড অ্যাকোয়া প্র্যাকটিস, বিদ্যুৎ সংযোগ, অফিস কক্ষ নির্মাণ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ যাবতীয় খরচ মেটাবেন।
এখন অনুদান পাওয়া ক্লাস্টারগুলো ভালো উৎপাদনের স্বপ্ন নিয়ে পোনা মজুদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চিংড়ি চাষিদের মধ্যে দেখা গেছে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য। কারণ এর ফলে চাষিদের আয় বেড়েছে। কমেছে চিংড়ি চাষের ঝুঁকি। আবার কোনো ধরনের রোগবালাইও নেই।
ফলে চিংড়ি চাষিদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছিল। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গেছে। পরিবেশবান্ধব এই ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি উৎপাদন বাড়িয়ে, বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানে থাকবে এমনটি প্রত্যাশা থাকল।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য