-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশা নিধনে আরো আন্তরিক হওয়া উচিত

ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশা নিধনে আরো আন্তরিক হওয়া উচিত

ডেঙ্গু এখন আর শুধু বর্ষাকালীন নয়, বরং সারা বছরের রোগ-ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে করোনা অতিমারির সংক্রমণ। করোনা প্রতিরোধে সরকারের ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান থাকলেও ডেঙ্গু মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি, প্রতিরোধ এমনকি তহবিল বরাদ্দ নেই বললেই চলে। আষাঢ়ের বৃষ্টিপাতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ।

 

হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর। হেমোরেজিক ও শক সিনড্রমে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবরও আছে। অথচ প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গুর পরিস্থিতির ওপর নিয়মিত নজরদারি করতে পারছে না।

 

সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন গণমাধ্যমে বলেছেন, দেশে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন দেখা গেলেও এ বছর কোনটির প্রাদুর্ভাব বেশি, তা জানা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। ডেঙ্গুর ওপর নজরদারি অর্থের অভাবে আপাতত বন্ধ রয়েছে।

 

অন্যদিকে, মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিভিন্ন স্থানে মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে সমন্বয় নেই বললেই চলে। ফলে, এ বছর ঢাকাসহ সারা দেশেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

 

ঢাকাসহ ৪৪ জেলার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গু রূপ বদলাচ্ছে বারবার। ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সেই বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছিল মে মাসের শেষে, যা কমেছে পরের বছরের জানুয়ারিতে।

 

২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ৫০ হাজারের বেশি রোগী পাওয়া যায় এবং ৯০ জন মৃত্যুবরণ করেন। ২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় এবং মৃত্যুবরণ করেন ৭ জন। করোনার কারণে সে বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কম দেখা দেয়। ২০২১ সালে ডেঙ্গু শুরু হয় জুলাই থেকে। সে বছর ২৮ হাজার ৪২৯ জন রোগী পাওয়া যায় এবং মারা যান ১০৫ জন।

 

২০২২ সালে ৬২ হাজার রোগী শনাক্ত হয় দেশে, যেখানে রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যু হয় ২৮১ জন। বেশি মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেছেন, দেরি করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসায় এমনটি হতে পারে। এজন্য জ্বর হলেই অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে। সংকটময় পরিস্থিতিতে হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দেয়। তাই ডেঙ্গু শুরু হলে আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে কোনো রোগী যেন অযত্নের শিকার না হয়।

 

ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসগুলোর ভবন, খোলা জায়গা, মাঠ, ফুলের টব, পানির পাম্প বা যেসব জায়গায় পানি জমে এ রকম পাত্র, ফ্রিজ বা এসির পানি জমার ট্রে, পানির ট্যাপের আশপাশের জায়গা, বাথরুম ও কমোড, গ্যারেজ, নির্মাণাধীন ভবন, লিফট ও সিঁড়ি, পরিত্যক্ত বস্তুসহ মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থলে যাতে পানি জমতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আরো সচেতন করতে হবে।

 

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। সিটি করপোরেশন যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে সেগুলোর বাস্তবায়ন যথাযথ হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তদারকি প্রয়োজন। স্কাউট, বিএনসিসির সদস্য এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে বেশি করে উদ্বুদ্ধ করা দরকার।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version