পবিত্র ঈদুল আজহা সমাগত। ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটির অবকাশে নানা ধরনের বিশেষ করে মৌসুমি অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণ। কোরবানির ঈদে রাজধানীসহ সারা দেশে বসে গবাদিপশুর হাট-বাজার, যা বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে হয়ে ওঠে মুখর। এ সময় নগরবাসী নাড়ির টানে গ্রাম-গঞ্জে কিছু কম গেলেও মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা দেশ-বিদেশ সফরে বেরিয়ে পড়েন। বড় বড় দোকানপাট, জুয়েলারি মার্কেট, সুপার মার্কেট, সুপার মল বন্ধ থাকে কয়েকদিন।
সুযোগ বুঝে চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারী, মলম ও অজ্ঞানপার্টি, পকেটমার, জাল টাকার ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায় বহুলাংশে। অসাধু প্রতারকচক্রের দৌরাত্ম্যে সাধারণ নিরীহ মানুষের হতাহতের ঘটনাও ঘটে। মহাসড়কসহ পথে-ঘাটে, যানবাহনে, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, স্টেশনগুলোতে যাত্রীসমাগম বেশি হওয়ায় অপরাধীরাও হয়ে ওঠে সক্রিয় ও বেপরোয়া।
এসব মৌসুমি অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশি তৎপরতা বেড়েছে। পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা বাহিনী, নৌপুলিশ ও আনসারসহ প্রতিটি ইউনিটকে মাঠে নামানোর প্রস্তুতিও চলমান।
বিভিন্ন স্থানে ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা, চেকপোস্ট বসানো, গবাদিপশুর হাটে নজরদারি, টহলদল গঠন করে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণ জোরদার করা হয়েছে। গরুর ব্যাপারিসহ সর্বস্তরের মানুষ যাতে নিরাপদে নির্বিঘ্নে যাতায়াত ও নিশ্চিন্তে ঈদুল আজহা উদ্যাপন করতে পারেন সেজন্য যাথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ পুলিশের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়িত্বও বটে। পাশাপাশি জনসাধারণকেও যথাসম্ভব সজাগ-সচেনত ও সতর্ক থাকতে হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পর সরকার এবার রূপকল্প-২০৪১-এর আওতায় স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। স্মার্ট গভর্নমেন্টের অন্যতম একটি ভিত্তি হলো বিশ্ব মানের স্মার্ট পুলিশ। ডিজিটাল আধুনিক স্মার্ট পুলিশ বাহিনী হবে যথাযথ অর্থে জনবান্ধব ও জনহিতৈষী, যেখানে জনসাধারণের জন্য পুলিশ কোনো ভীতির কারণ হবে না, বরং সেবা পাবে সর্বতোভাবে সর্বোত্তম ওপায়ে। উল্লেখ্য, বিশ্বের আধুনিক আদর্শ মডেল ও স্মার্ট পুলিশ হিসেবে বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে লন্ডন পুলিশের। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকেও অবতীর্ণ হতে হবে অনুরূপ ভূমিকায়।
নিরাপদ রাজধানী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে সার্বক্ষণিক নিবিড় নজরদারিতে থাকা নিরাপদ রাজধানী। ঢাকার ৫০ থানা এলাকায় বসানো হয়েছে ১৬ হাজারের বেশি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। যেগুলোর মাধ্যমে চলছে সার্বক্ষণিক ভিডিও মনিটরিং। সিসি ক্যামেরার মধ্যে ১৫ হাজার ব্যবহার হচ্ছে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের কাজে। বাকি ১ হাজার ব্যবহার হচ্ছে সর্বাধুনিক স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালসহ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও চলাচলের কাজে, যাতে কমানো যায় সড়ক দুর্ঘটনা।
মোটকথা, অপরাধ করে পার পাবে না কেউ পুলিশের হাত থেকে, তা সে যে ধরনের অপরাধই হোক না কেন। তবে এসবের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের জন্য থাকতে হবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, দক্ষ জনবল, স্ট্রাইকিং ফোর্স, অত্যাধুনিক যানবাহন, ট্যাকটিক্যাল বেল্টসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য