-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

কর্মসংস্থানে ফেরা হোক স্বস্তিতে

কর্মসংস্থানে ফেরা হোক স্বস্তিতে

ঈদুল আজহা উদযাপন শেষে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। বলা যায়, এবার ঈদে ঘরে ফেরা স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে ফেরার সময় বিভিন্ন পথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। আজ থেকে ট্রেন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে ফিরতি মানুষের ভিড় বাড়বে। চলবে আগামী কয়েক দিন পর্যন্ত। এই সময়টা বিশেষ নজরদারি দরকার। বছরে দুটি ঈদ মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে বড় উৎসব।

 

কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে যে যেখানেই থাকুক না কেন, দুটি ঈদে অন্তত তারা নিজ নিজ পরিবার ও স্বজনদের কাছে ফিরে যায়। এবার ঈদযাত্রায় টিকিটের ভোগান্তি না থাকলেও যানজট ছিল, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের মহাসড়কগুলোতে। উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়তি মানুষের চাপ অনেকটাই পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপরও দুর্ঘটনা রোধ করা যায়নি।

 

সড়ক দুর্ঘটনা চালকের অসতর্কতার কারণেই প্রধানত ঘটে থাকে। ঈদের সময় অধিক যাত্রী পরিবহন এবং চালকের তাড়াহুড়ার কারণে প্রতিবারই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। এবারের ঈদে ১৫-২০ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গ্রামের বাড়িতে গেছেন। বাড়ি ফেরার সময় ছাড়াও বাড়িতে গিয়ে অনেকেই বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি অতীতের তুলনায় বেড়েছে। দুর্ঘটনার মধ্যে বেপরোয়া মোটরসাইকেলে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

 

পাশাপাশি অটোরিকশার মতো বাহনের কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বেশি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২৪ থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ২৪ জুন থেকে যাতায়াত শুরু করেন কর্মজীবী মানুষ। এরপরের পাঁচ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৬ জনের মৃত্যু হয়। এসব দুর্ঘটনায় আহত হন আরো ১১৮ জন।

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯০টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। মোট ২৯টি দুর্ঘটনায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ৩৪ জন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৭ জুন। ওইদিন ২৭টি দুর্ঘটনায় ২৫ জনের প্রাণহানি হয়। আহত হন আরো ৪৪ জন। বেশিরভাগ দুর্ঘটনার জন্য মূলত দায়ী চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও অদক্ষতা।

 

এ ছাড়াও রয়েছে যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণে অনীহা। সড়কের ত্রুটির কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। একেকটি দুর্ঘটনার পর অনেক পরিবারই তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে। দেশে এসব পরিবারের সংখ্যাও কম নয়। এসব সড়ক দুর্ঘটনায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। প্রতি বছরই ঈদযাত্রাকে নিরাপদ ও নির্বিঘœ করতে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো নানা পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেয়, আশ্বাস-প্রতিশ্রুতির দেয়। এবারো দিয়েছে।

 

কিন্তু দুর্ভোগ কমাতে পারলেও দুর্ঘটনা পিছু ছাড়েনি। ঈদের পর দিন ফাঁকা সড়কে বেপরোয়া গতিতে যান চালানোর পরিণামে দেশের নানা স্থানে অনাকাক্সিক্ষত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এ কথা ঠিক যে, মৃত্যু মানুষের স্বাভাবিক নিয়তি। কিন্তু দুর্ঘটনায় মৃত্যু কারো কাম্য নয়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু থেকে মানুষকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার দায় সংশ্লিষ্টদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, দেশের বিস্তৃত সড়ক পথকে নিরাপদ করে মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে সার্বিক সতর্কতা ও নজরদারি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

 

সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোও যেহেতু চিহ্নিত, সেহেতু সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। ঈদে ঘরে ফেরার সময় সড়ক ও নৌপথে ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে সরকার যে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে, কর্মস্থলে ফেরার ক্ষেত্রেও তেমন ভূমিকা রাখতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version