স্মার্টফোন শুধু যাপিত জীবনকে সহজই করছে না, একইসঙ্গে কিছু ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই কমবেশি ভুগছে মোবাইল আসক্তিতে। এতে নীরবে-নিভৃতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। হালে চোখের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। করোনা সংক্রমণের সময়ে অভিভাবকরা অনেকটা বাধ্য হয়েই গৃহবন্দি শিশুদের হাতে তুলে দিয়েছেন মোবাইল ফোন।
শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল অ্যাপ ব্যবহার করে চালিয়েছে লেখাপড়া। এর পাশাপাশি গেমস, ইউটিউব, বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করার মাধ্যমে ক্রমশ আসক্ত হয়ে পড়েছে সেলফোনে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে নানা অপতৎপরতা।
মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে ঘাড় ব্যথা, চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া, কানে কম শোনা, অস্থিসন্ধির ক্ষতি, শুক্রাণু কমে যাওয়াসহ প্রত্যক্ষভাবে তৈরি হচ্ছে নানা শারীরিক সমস্যা। মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে ন্যামোফোবিয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, চিন্তা ও স্মরণশক্তি কমে যাওয়া এবং পর্নো আসক্তি। অনিদ্রার কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে সেলফোন।
মাথা ও গলার টিউমারের কারণ হতে পারে অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার। দীর্ঘক্ষণ বসে মোবাইল দেখলে ঘাড় ও মেরুদÐে সমস্যা দেখা দেয়। ফোনের নীলাভ আলো চোখের রেটিনায় দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত তৈরি করতে পারে। এটি অন্ধত্বের কারণও হতে পারে বলে মনে করেন চক্ষু বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য বলছে, দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ১২ কোটি ৬১ লাখের বেশি। এর মধ্যে মুঠোফোনে ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ৪০ লাখের বেশি এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক ১ কোটি ২০ লাখের বেশি। গত বছরের জুনে দেশে মুঠোফোন গ্রাহক ছিলেন ১৮ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার।
ইউনিসেফের তথ্যানুসারে, বিশ্বে প্রতি তিনজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একজন হচ্ছে শিশু। প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু নতুন করে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণধার। তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখা সবার নৈতিক দায়িত্ব। বাস্তবে চোখের সামনে প্রতিনিয়ত অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে আগামী প্রজন্ম।
সৃজনশীল কাজ, পড়ালেখা তাদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে সামাজিক বন্ধন, নতুন কিছু শেখা বা জানা, খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ প্রায় নেই। অল্প বয়সি ছেলেমেয়েদের বাড়ছে স্থূলতা।
এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম থেকে ভালো কিছু আশা করা যাবে না। প্রযুক্তির আবিষ্কারকে ব্যবহার করতে হবে ভালো কাজের উদ্দেশ্যে, এ বিষয়ে শিশু-কিশোরদের সচেতন করতে হবে। শিশু বয়সে কোনোভাবেই তাদের হাতে সেলফোন দেয়া যাবে না। এ বিষয়ে অভিভাবকদের প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে।
শিশুদের জন্য খেলার মাঠ প্রসারিত করতে হবে। তাদের সঙ্গে গল্প করা ও সময় দেওয়া প্রয়োজন অভিভাবকদের। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকালে নানা ধরনের অশোভনীয় ভিডিও চলে আসে। অজান্তেই এসবের খারাপ প্রভাব পড়ছে শিশু মনে। কোনো অশ্লীল ছবি বা ভিডিও যেন সহজে স্ক্রিনে না আসে, সে বিষয়ে বিটিআরসির যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের দাবি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য