-->
সম্পাদকীয়

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য

কোভিড-১৯ পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ঢাকায় যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টনের বাংলাদেশ সফরটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টাসহ একাধিক পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন।

 

সেসব আলোচনায় রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা, রাজনীতি ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ইত্যাদি ইস্যু উঠে এলেও সর্বাধিক প্রাধান্য পেয়েছে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ। বাণিজ্যের পাশাপাশি গুরুত্ব পেয়েছে শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, অ্যাভিয়েশন খাতে সহযোগিতা ইত্যাদি। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উষ্ণ ও বন্ধুপ্রতিম। দেশটি বাংলাদেশের জন্য একটি অফুরন্ত রপ্তানি পণ্যের বাজারও।

 

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যে ৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। তবে এটি আরো বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরো বেশি বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন সে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীকে। প্রত্যুত্তরে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী সে দেশের ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয় বলে জানিয়েছেন।

 

বিদ্যমান সমস্যার দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। যাতে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিনিয়োগকে আরো জোরদার ও শক্তিশালী করা যায় আগামীতে।

 

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের আনুষ্ঠানিক অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য। এর বাইরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকটি ছিল এক কথায় উষ্ণ, আন্তরিকতাপূর্ণ, সৌহার্দ্য-সম্প্রতিসুলভ সর্বোপরি ফলপ্রসূ।

 

একপর্যায়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি আমাদের পরিবারের অনুপ্রেরণা। আমি আপনাকে অনেক বছর ধরে অনুসরণ করছি। আপনি একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা।’ বাংলাদেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অকুণ্ঠ প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আপনি উন্নয়নের রোল মডেল’। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের গৌরবময় ভূমিকার প্রশংসা করেন।

 

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে যুক্তরাজ্য জাতিসংঘ কর্তৃক এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় স্বীকৃতির পাশাপাশি ২০২৭ সাল পর্যন্ত সে দেশে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশকে। একই সঙ্গে দেশটি বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে আরো বিনিয়োগসহ বেসরকারি শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়াতেও সবিশেষ আগ্রহী। দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বাংলাদেশি বিশেষ করে সিলেটীরা প্রভূত অবদান রাখছেন।

 

তদুপরি ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ায় যুক্তরাজ্য স্বভাবতই বিশ্বে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরো আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তৃতীয় বৃহত্তম গন্তব্য যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশও হচ্ছে যুক্তরাজ্য। সে অবস্থায় দেশটিতে ২০২৭ সাল পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা পাওয়ায় এর অনিবার্য প্রভাব পড়বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যত্রও। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট অর্জন অবশ্যই।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version