-->
সম্পাদকীয়

দাশেরকান্দি শোধনাগার প্লান্ট কতটা ভূমিকা রাখবে দূষণ রোধে?

দাশেরকান্দি শোধনাগার প্লান্ট
কতটা ভূমিকা রাখবে দূষণ রোধে?

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম একক পয়ঃশোধনকেন্দ্র দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের (এসটিপি) কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। দেশে এটাই প্রথম এ ধরনের প্লান্ট। সমন্বিত আধুনিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিন ৫০ মিলিয়ন পয়ঃশোধন করা সম্ভব হবে। রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে সুদৃশ্য এ অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

 

পানির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহব্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা পানি শোধন করে দিচ্ছি, এ পানি ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। অযথা যেন পানি নষ্ট না হয়। প্রধানমন্ত্রীর এ আহব্বান সময়োপযোগী। পানি মানবজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে পানযোগ্য পানির পরিমাণ সামান্য। কাজেই পানি ব্যবহারে এবং এর অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

 

জানা গেছে, প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব। এটি হাতিরঝিল সমন্বিত একটি প্রকল্প অংশ। দাশেরকান্দি শোধনাগার প্লান্ট, যা খিলগাঁও থানার অন্তর্গত আফতাবনগর সংলগ্ন এবং গুলশান (একাংশ), বনানী, তেজগাঁও, নিকেতন, মগবাজার, মালিবাগ, আফতাবনগর, বাড্ডা, কলাবাগান, পান্থপথ, ধানমন্ডি (একাংশ) ও হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার পয়ঃশোধনের ব্যবস্থা করবে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই এখানে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টন ছাই পাওয়া যাবে। এ ছাই প্রসেসিং করা হলে ১০ শতাংশের মতো পাওয়া যায়। যার পরিমাণ প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ টন। এ ছাই সিমেন্ট কোম্পানিতে যাবে।

 

এতে করে নদীদূষণের হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি অর্থনীতিকভাবে লাভবান হবে। শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত পানি পরিশোধন না করেই সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদী কিংবা খাল-বিলে। ফলে দূষিত হচ্ছে সেসব জলাশয়। কৃষি জমিতে ব্যবহৃত হচ্ছে নানা রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। সেসব রাসায়নিক সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদী ও অন্যান্য জলাশয়ে মিশছে। ফলে দূষিত হচ্ছে পানি, যা পানির গুণগতমান নষ্ট করছে।

 

এটা জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিসহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। পানিদূষণ আজ কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা গোষ্ঠীবিশেষের সমস্যা নয়। এ সমস্যা গোটা পৃথিবীর। তাই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে পানিদূষণ রোধ এবং পানির পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

 

পানিদূষণের প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে নদনদী, খালবিল, সমুদ্র ইত্যাদি। তাই ভূ-উপরিস্থ এসব পানিকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নদনদীতে সব ধরনের কঠিন, গৃহস্থালি ও স্যানিটারি বর্জ্যরে মিশ্রণ রোধ করা অত্যাবশ্যক। নদীতীরে শিল্প-কারখানা নির্মাণ বন্ধ, সেইসঙ্গে দেশের বড় বড় শিল্প জোনের শিল্প-কারখানার রাসায়নিক ও ট্যানারি বর্জ্য পরিশোধন বাধ্যতামূলক করা এবং এর নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করতে হবে।

 

তাই প্রতিটি শিল্প-কারখানার সঙ্গে শোধনাগার বা অ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক করা আবশ্যক। পানি বিশ্লেষকদের মতে, আগামী চার দশকের মধ্যে আমাদের দেশে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ হ্রাস পাবে আশঙ্কাজনক হারে। ফলে পানি সংকটের সৃষ্টি হবে। পানিকে দূষণমুক্ত রাখতে পয়ঃশোধন প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version