-->
সম্পাদকীয়

এসব অনিয়ম রুখবে কে?

এসব অনিয়ম রুখবে কে?

রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের পাশে মহানগর প্রজেক্ট চেকপোস্টের সামনে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ভিক্টর ক্লাসিক নামের বাসের ধাক্কায় জাহিদ হাসান (২৪) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। বাসটি ওই শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দিয়ে পালানোর জন্য তড়িঘড়ি করে হাতিরঝিল সড়কে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে এক শিশুকে চাপা দেয়। এতে ওই শিশুটিরও মৃত্যু হয়েছে।

 

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রামপুরা ব্রিজ ও হাতিরঝিল সড়কে এ ঘটনা ঘটে। কে থামাবে এদের দৌরাত্ম্য? এমন মৃত্যুর অবসান কি হবে না? প্রায়ই রাজধানীতে বেপরোয়া চালকদের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বলা যায়, গণপরিবহন এখন সাক্ষাৎ যমদূত হিসেবে আর্বিভূত। এসব মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া হলেও অধিকাংশই বেপরোয়া পরিবহন চালকদের দায়হীন হত্যাকান্ড।

 

পরিবহন শ্রমিকদের শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন ও মালিকদের তৎপরতার কারণে সড়কে নিহতদের পরিবার বিচার পায় না। চালকরাও দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি ছাড়াই বেরিয়ে আসে। আবারো তারা গাড়ি রেসের পাল্লায় মেতে ওঠে। সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনা বাড়লেও চালকদের সতর্ক করার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দিন দিন যেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে নানারকম বিশৃঙ্খলা, নিয়মহীনতাসহ বেপরোয়া গাড়ি চালনা, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানো এবং পথচারীদের যত্রতত্র রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করতেও দেখা যায়।

 

ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা আদায়সহ পুলিশ মাঝেমধ্যে বাড়তি পর্যবেক্ষণ করলেও সড়কে পুরোপুরি থামেনি বেপরোয়া গতির যান চলাচল। যার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে পথচারীকে। গত বছর পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সমাজব্যবস্থাকে ঝাঁকুনি দেয়া নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরও আমাদের সড়ক ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। বিশেষ করে রাজধানীতে বাসে চলাচল বিপজ্জনক। এমন ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পরিবহন খাতে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা। বেতনভুক্ত চালক দিয়ে লোকাল বাস চালালে মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

 

এ অবস্থা থেকে বের হতে নগরীর অধিকাংশ পরিবহন মালিক তাদের বাস-মিনিবাস চালককে চুক্তিতে চালাতে দিচ্ছে। চুক্তির কারণেই চালকরা বেপরোয়া। কারণ একই রুটের যে বাস আগে শেষ গন্তব্যে পৌঁছাবে সেই ফিরতি ট্রিপের সিরিয়াল পাবে আগে। এ কারণে একই রুটের বাসের মধ্যেই ভয়াবহ মরণরেস দেখা যায়। এসব চালকের অনেকেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। অনেক সময় চালকের পরিবর্তে বাস চালায় হেলপার। এরা কেউ আইনের তোয়াক্কা করে না। দেশে সড়ক পরিবহন আইন আছে, রয়েছে শাস্তির বিধান। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের দাপটে দোষী চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রায় অসম্ভব।

 

সড়কে নৈরাজ্যের কারণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ করা হলেও তা যে অরণ্যেরোদনে পর্যবসিত হচ্ছে। এ জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version