দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে বাংলাদেশি প্রবাসীরা পেতে যাচ্ছেন এনআইডি, যা অবশ্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। সোমবার প্রথমবারের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বসবাসরত শতাধিক বাংলাদেশির হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র এনআইডি, যা পাওয়া তাদের জন্মগত অধিকার।
উল্লেখ্য, ১৫ বছর আগে ছবিসহ জাতীয় ভোটার তালিকা প্রণয়নের শুরু থেকেই প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকরা এনআইডির দাবি করে আসছে। নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০১৯ সালে কেএম নূরুল হুদা কমিশনের মাধ্যমে শুরু হয় অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া, যা স্থগিত হয়ে যায় কোভিড-১৯ অতিমারির অভিঘাতে। যা হোক, অবশেষে দুবাইয়ে বসবাসরত বাংলাদেশিদের এনআইডি প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন ও প্রদানের নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো, যা বিশেষ করে শ্রমজীবী, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীদের জন্য বয়ে আনবে স্বস্তি ও নিশ্চয়তার বার্তা। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নির্বাচন কমিশন মধ্যপ্রাচ্যসহ আরো ১৫টি দেশে এনআইডি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে অচিরেই।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা এনআইডি পেলে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিবর্তে বৈধপথে দেশে ডলার পাঠাতে উৎসাহিত হবে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ হবে। এর পাশাপাশি এই সেবা অন্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধাসহ মোবাইল ব্যাংকিং, পাসপোর্ট প্রাপ্তি ইত্যাদি কার্যক্রম আরো সহজ ও অবারিত করবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগের দাবিটি ঝুলে আছে দীর্ঘদিন থেকে। যা তারা পেতে চান পোস্টাল ব্যালট পেপার, অনলাইন প্রক্রিয়া, স্থানীয় দূতাবাসে ইভিএমে ভোটদান অথবা অন্যবিধ নিরাপদ মাধ্যমে। এনআইডি হাতে পেলে এই কাজটি আরো সহজ ও উন্মুক্ত হবে আগামীতে।
বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ৮০টি দেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। বিদেশে কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন, যাদের অনেকেই ভোটার। জাতীয় নির্বাচনে মূল্যবান ভোট প্রদান থেকে তারা বঞ্চিত থাকছেন। এ সমস্যার সমাধানও প্রত্যাশিত অবশ্যই। সম্প্রতি ন্যাশনাল স্মার্ট কার্ড এনআইডির দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এখন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নিবন্ধনের অফিস নামের পৃথক বিভাগ।
এর ফলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করার ক্ষমতা আর থাকবে না নির্বাচন কমিশনের। সংস্থাটি শুধু ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের ভোটার তালিকাভুক্ত করবে।
সরকারের পরিকল্পনা হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত হওয়ার পর সবার জন্য একক জাতীয় পরিচয়পত্রের (ইউনিক আইডি) ব্যবস্থা চালু করা। একই সঙ্গে জন্মের পরপরই নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের বিষয়টি স্থান পেয়েছে সরকারের পরিকল্পনায়, যা বাস্তবায়িত হতে ৫-৬ বছর লাগতে পারে।
অর্থাৎ, শিশুর জন্মের পরপরই যে নিবন্ধন হবে সেই নম্বরই ব্যবহার হবে সব জায়গায়। বলাবাহুল্য, এটি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত সময় উপযোগী সর্বোপরি বহুমুখী ব্যবহারের জন্য যা সহজসাধ্য।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অধীনে ন্যস্ত হলে নাগরিকদের যেন এনআইডি পেতে কোনো রকম ভোগান্তি পোহাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে অবশ্যই। এর পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও যথাসময়ে এনআইডি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকা বাঞ্ছনীয়।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য