আর্থিক খাতে সাইবার অপরাধ বাড়ছেই। সরকারি সংস্থা, নতুন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, আর্থিক, সামরিক, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও জ্বালানি খাতকে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে সাইবার অ্যাটাক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাইবার ঝুঁঁকি বেড়েছে ব্যাংক খাতে। সাইবার নিরাপত্তা বজায় রাখার দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থা বিজিডি ই-জিওভি সিআইআরটি ২০১৬ সাল থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ৫৭৬টি সাইবার অ্যাটাকের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে এমন তথ্য গভীর উদ্বেগ জাগায়।
ব্যাংক খাতের সাইবার ঝুঁঁকি নিয়ে ২০২২ সালের মাঝামাঝি গবেষণা পরিচালনা করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। ওই রিপোর্টে উঠে আসে উদ্বেগজনক সব তথ্য। দেশের ৩৬ শতাংশের বেশি ব্যাংক সাইবার হামলার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে বিনিয়োগ ঘাটতি, দক্ষ কর্মী সংকট এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও গ্রাহকদের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১৮টি ব্যাংক সাইবার হুমকি পর্যবেক্ষণ প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ, তদন্ত এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার (এসওসি) স্থাপন করেছে।
চলতি মাসে বাংলাদেশে সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার অন্তত ১৫ দিন আগে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১৭০ গিগাবাইটের বেশি তথ্য হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। সাইবার ভুবন যতই বিস্তৃত হচ্ছে, সাইবার অপরাধীরা ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মূলত ব্যক্তি পর্যায়ের অপরাধই বেশি সংঘটিত হলেও এখন নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং ব্যাঙ্কগুলোর ওপর ধূর্ত নজর দেশি ও আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের।
ব্যক্তিগত তথ্যও এক অর্থে আর্থিক উদ্দেশ্যেই হ্যাক করা হয়। এভাবে প্রতারণার পাশাপাশি ব্ল্যাক মেইলের মাধ্যমে অর্থ হাতানোর নতুন মাধ্যম হয়ে উঠেছে সাইবার জগৎ। ডিজিটাল অপরাধীদের এখনই রোখা না গেলে আর্থিক ও সামাজিক সংকট বাড়বে আগামীতে। সেইসঙ্গে মানুষে মানুষে স্বাভাবিক সম্পর্কের ভেতর সন্দেহ অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা বৃদ্ধি পেয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে সাইবার মনিটরিং ও সাইবার ইন্টেলিজেন্স, সাইবার ইনভেস্টিগেশন ও সাইবার সাপোর্ট সেন্টার সক্রিয় রয়েছে, যদিও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সাইবার অপরাধীরা দানব হয়ে ওঠার আগে তাদের যেকোনো মূল্যে রুখতে হবে। সে কারণে সাইবার নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধ দমনে নিয়োজিত সংস্থাসমূহের কাজে গতি আনা চাই। সেইসঙ্গে অনলাইন ব্যবহারকারীদের সচেতনতাও বাড়াতে হবে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে আইসিটি সিস্টেমের নিয়মিত প্যাঁচ আপডেট, লাইসেন্সপ্রাপ্ত সফটওয়্যার ও অন্যান্য সলিউশন, সিস্টেমের দুর্বলতা মূল্যায়নের জন্য সেগুলো নিয়মিত পরীক্ষা, সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও স্টোরেজ ব্যাকআপ রাখার বিকল্প নেই। এ বিষয়ে শুধু আন্তরিকতাই যথেষ্ট নয়, চাই দক্ষতা ও সক্রিয়তা।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য