-->
শিরোনাম

এই সরকারেই আস্থা ব্যবসায়ীদের

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী
এই সরকারেই আস্থা ব্যবসায়ীদের

গত ১৫ জুলাই ব্যবসায়ীদের এক মহাসম্মেলন হয়ে গেল। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা অংশ নিয়েছিলেন। সুদীর্ঘ সাড়ে ৫ ঘণ্টার এই সম্মেলনে অনেকেই বক্তব্য রাখেন, যা গণমাধ্যমের সৌজন্যে আমি অবলোকন করেছি। যার ভিত্তিতে দৃশ্যমান ও অনুভূতিনির্ভর কিছু কথা তুলে ধরতে চাই।

 

বিগত কয়েক দশকে দেশে যেমন বেড়েছে শিল্প বাণিজ্যের প্রসার, তেমনি ওই অঙ্গনে প্রবেশ করেছেন এমন সব ব্যক্তি যারা শিক্ষা-দীক্ষায় প্রাগ্রসর, জ্ঞান বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পারঙ্গম। তাদের কেউ কেউ সুবক্তাও বটে। যারা টেলিভিশনে কিংবা সশরীরে উপস্থিত থেকে ওইসব বক্তব্য শুনতে পারেননি, তারা একটি পত্রিকার সুদীর্ঘ রিপোর্টে চোখ বুলালে আমার উক্তির সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।

 

বক্তাদের কারো কারো উক্তিতে বাহুল্য, বাগাড়ম্বরতা ও অন্যকে তুষ্ট করার প্রবণতা কিছুটা লঙ্ঘিত হলেও তাদের উপস্থাপিত তথ্য ও যুক্তির বিশ্লেষণে এ কথা বলা সঙ্গত যে, তারা দেশের প্রকৃত চিত্র ও দৃশ্যটা তুলে ধরেই সুকৌশলে নিজেদের দাবি-দাওয়া পেশ করেছেন। ব্যবসায়ীরা তাদের বক্তব্যে শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার বলে উল্লেখ করেছেন এবং স্মার্ট দেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

 

তাদের মতে, গত ৫০ বছরে যে উন্নয়ন হয়নি ১৪ বছরে তা হয়েছে; ১৪ বছরে সব সেক্টর ডিজিটাল হয়েছে; বিদেশি কোম্পানির বাংলাদেশের প্রতি আস্থা এসেছে; স্থিতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে;

 

প্রধানমন্ত্রী এসব বক্তব্য শুনেছেন এবং হয়তো দীর্ঘদিন পর কিছুটা স্বস্তিবোধও করেছেন, কেননা ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো বিগত প্রায় ৬ মাস ধরে সরকারের খুঁতই দেখে আসছে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। আমরা চাই স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট ইকোনমি। হাওয়া ভবনের মতো খাওয়া ভবন নেই। ব্যবসায়ীদের কেউ ঝামেলা করবে না।

 

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন। নতুন প্রজন্ম উঠতি জনশক্তি। তাদের উৎসাহিত করতে চাই। আজকে আমাদের সামনে আছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, যেখানে বেশির ভাগ দক্ষ জনশক্তি। ১৪-১৫ বছর আগে যে বাংলাদেশ ছিল এখন আর সেই বাংলাদেশ নেই। আমরা বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি। এগিয়ে আসুন, আপনারা কাজ করুন। ২০৪১-এর মধ্যে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।

 

দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কোনো কোনো সদস্যের একপেশে উপস্থাপনা ও বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী বক্তব্য তারা তুলে ধরেছেন। আশা জাগানিয়া ব্যাপার হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন এবং শেখ হাসিনার সরকারের পুনঃপ্রত্যাবর্তন কামনা করছেন। অনুমান করছি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করলে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন গণমাধ্যমগুলোকে আরো একটু নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ হওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন, যা কানার হাতে কুড়াল তুলে দেয়ার প্রবণতাকে প্রতিহত করতে পারে।

 

দেশের গণমাধ্যম তথা কয়েক হাজার পত্র-পত্রিকা ও বৈধ-অবৈধ ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পরিবেশিত তথ্য, মতামত, সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় বিশ্লেষণ করলে নিরপেক্ষ দেশবাসী ও নিরপেক্ষ বিদেশিরাও উপলব্ধি করতে বাধ্য হবেন যে, দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ না হলেও পর্যাপ্ত। এসব গণমাধ্যমের সংবাদ ও মতামতগুলো যদি সব বিদেশি উপলব্ধি করতে পারতেন, তাহলে দেশে যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে তা নিঃসংকোচে বলতে বাধ্য হতেন।

 

গণমাধ্যমগুলো ৭৫ ভাগ ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনা করেও যদি অন্তত ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো, রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রা ও সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে বর্তমান সরকারের প্রয়াসকে তুলে ধরত, তাহলে শেখ হাসিনার সরকার ও ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা সমান্তরাল ও একদেশদশী হতো। ব্যবসায়ী নেতারা নিজেদের সমালোচনা থেকে বিরত থাকেননি।

 

আহমেদ আকবর সোবহান তো স্বগোত্রীয়দের কর প্রদানে কৃপণতার সমালোচনা করেছেন। তবে তারা তাদের সতীর্থদের দেশ ও ভোক্তাবিরোধী কর্মকান্ড সজ্ঞানে প্রতিহত না করে তাদের বরঞ্চ পরোক্ষ উৎসাহ দিচ্ছেন। দেশে এই মুহূর্তে বিদেশিদের আনাগোনা বেড়েছে। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে বিরোধী রাজনীতি চাঙ্গা হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোর একাংশ এসবকে উপজীব্য করে সরকারবিরোধী একটি আবহ যখন সৃষ্টি করেছে; তখন ব্যবসায়ীদের উপরোক্ত বক্তব্য ও অবস্থান আওয়ামী লীগকে চাঙ্গা করবে অবশ্যই।

 

ব্যবসায়ীদের সবাই না হলেও একাংশ বহুল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরও যদি দুর্নীতি ও গণশোষকের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হন, তাহলে সাধারণ মানুষের মনে বর্তমান সরকারের প্রতি নেতিবাচক ধারণা হয়তো জাগবে, যার সদ্ব্যবহার বিরোধীরা করবে। মূল্যস্ফীতির কারণে যখন দেশে সাধারণ ভোক্তাদের নাভিশ্বাস, তখন ব্যবসায়ীদের একাংশ ব্যভিচারে লিপ্ত।

 

তারা কি ওই অংশ যারা বর্তমান সরকারকে চায় না? সে কারণে দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ীদের প্রতি একান্ত অনুরোধ আপনারা সতীর্থদের আচরণ সংযতকরণে ভূমিকা রাখুন এবং আপনাদের নিয়ন্ত্রণাধীন গণমাধ্যমগুলোকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে ব্রতী হতে বলুন।

 

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ; উপাচার্য, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version