-->
শিরোনাম

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

বিশেষ গঠন-প্রকৃতির কারণে তেল-গ্যাসসহ নানা খনিজসম্পদ সঞ্চিত রয়েছে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে। সমুদ্র বিজয়ের পরে কেটে গেছে সুদীর্ঘ সময়। আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা নিরঙ্কুশ হয়।

 

কিন্তু গত একযুগ ধরে কার্যকর অর্থে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু না হওয়াটা দুঃখজনক। দেরিতে হলেও পেট্রোবাংলা সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে যে পরিকল্পনা করেছিল তার পথ খুলল। সুসংবাদ হলো বুধবার উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) অনুমোদন করেছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। নতুন পিএসসিতে বণ্টন অর্ধেক হয়েছে অর্থাৎ বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি (আইওসি) যাই উত্তোলন করুক না কেন তারা অর্ধেক গ্যাস পাবে। এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল।

 

বঙ্গোপসাগরে ১০৩ টিসিএফ গ্যাস হাইড্রেটের তথা মিথেন গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার কথা দুই বছর আগেই জানা গেছে। খাদ্য এবং কসমেটিকস পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে সী-উইড বা শৈবালের সম্ভাবনার বিষয়টিও তখন সামনে আসে। ২২০ প্রজাতির শৈবালের সন্ধান মিলেছে। এসব কাজে লাগানোর জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসারও আহব্বান জানানো হয়েছিল।

 

আমরা আগেও বলেছি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জীবনরেখা বঙ্গোপসাগর সাম্প্রতিক সময়ে আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহের কাছে ভূরাজনৈতিক কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভারত, চীন ও জাপানের বিপুল বিনিয়োগই সেটি স্পষ্ট করে দিয়েছে। বাংলাদেশ জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকার সঙ্গে মিলিতভাবে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিআইজি-বি) নামে পরিচিত প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূলীয় অবকাঠামো নির্মাণে সম্পৃক্ত রয়েছে।

 

জাপান কুতুবদিয়ার মাতারবাড়িতে এলএনজি আমদানি সুবিধাসম্পন্ন একটি বন্দর নির্মাণ করছে। বঙ্গোপসাগরে টোকিওর উপস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জাপান এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। জাপান, চীন এবং ভারতের অর্থায়নে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের চারটি স্থানে গভীর সমুদ্রবন্দর, অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ বেশ জোরেশোরে এগিয়ে চলেছে। এসবই সুনীল অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য।

 

বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার মধ্যে শুধু বিপুল মৎস্য ভান্ডার নয়, রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদের ভান্ডার। প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে বিশ্বের অনেক দেশই তাদের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূূচির মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

 

বাংলাদেশের মতো একটি উপকূলীয় রাষ্ট্রের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর সহযোগিতা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ, মৎস্য রপ্তানি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ সর্বোপরি জীববিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার উত্তম সম্ভাবনা রয়েছে। সব সম্ভাবনাকে সর্বতোভাবে কাজে লাগানোই এখন লক্ষ্য।

 

সাগরে বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেটের উপস্থিতি ও মজুতের সমূহ সম্ভাবনা আগামী শতকে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সামগ্রিক চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলেও আশা করা হচ্ছে। সেজন্য চাই সাগরের সম্পদ উত্তোলনের উদ্বোধন। আমরা আশাবাদী হতে চাই। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহব্বান যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version