-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

বাঘের সংখ্যায় সুবাতাস

বাঘের সংখ্যায় সুবাতাস

বাংলাদেশের গর্ব বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ হিসেবে খ্যাত বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত প্রাকৃতিক সুরক্ষা সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কিছুটা হলেও বেড়েছে। ২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য।

 

এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঘ করো সংরক্ষণ সমৃদ্ধ হবে সুন্দরবন’। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির অবশ্য কিছু কারণও আছে। প্রধান কারণ বাঘের খাদ্য উপযোগী জীবজন্তুর সংখ্যা বৃদ্ধি। সুন্দরবনের বাঘ প্রধানত ছয় ধরনের প্রাণী খেয়ে থাকে। সেগুলো হলো মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, বন্য শূকর, বানর, সজারু ও গুঁইসাপ। এর মধ্যে তিনটি প্রাণী- চিত্রা হরিণ, শূকর ও বানরের সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

 

কমেছে মায়া হরিণ, সজারু ও গুঁইসাপের সংখ্যা। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এসব জীবজন্তুও অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশের বন বিভাগ, জার্মান কো-অপারেশন এবং প্রকৃতি সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন সুইজারল্যান্ড শাখার সহযোগিতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক-গবেষক আবদুল আজিজ পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য-পরিসংখ্যান। বাঘ সংরক্ষণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে এই জরিপ সহায়ক হতে পারে।

 

এটি একটি আশাব্যঞ্জক খবর যে, বিশ্বে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে শত প্রতিক‚লতার মধ্যেও। প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ) এবং গ্লোবাল টাইগার ফোরাম পরিবেশিত তথ্যে সর্বশেষ বাঘ সম্পর্কিত খবরাখবর মিলেছে।

 

সংস্থা দুটি বলেছে, বৈশ্বিক গণনায় বাঘের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৯০টির বেশি। ২০০০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২০০। তবে একশ বছর আগে বাঘ ছিল ১ লাখ। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বন-জঙ্গলের আশপাশের স্থানীয় মানুষজন এবং সংরক্ষণ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের তৎপরতা। সংস্থা দুটির মতে, একসঙ্গে কাজ করলে যে কোনো বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থল রক্ষা করা সম্ভব।

 

টাইগার ফোরামের হিসাব মতে, বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি বাঘের আবাসস্থল ভারত। ভারতের রাজস্থান, উত্তর প্রদেশসহ বাঘ অধ্যুষিত অঞ্চল সংরক্ষণ কাজে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করার ফলে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বাঘের সংখ্যা। অনুরূপ গুজরাটের গির অরণ্যে বেড়েছে সিংহের সংখ্যাও।

 

এখানে যা উল্লেখ্য তা হলো, বাঘ ও সিংহের রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় অধিবাসী তথা গ্রামবাসীরাই। বন বিভাগ তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করে মাত্র। সে কারণে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে রাশিয়া, ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশসহ অন্যত্র।

 

কিছু হুমকিও আছে। সুন্দরবনের ওপর স্থানীয়দের মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতাই বাঘের সংখ্যা কমার অন্যতম কারণ। ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা জীবন-জীবিকার জন্য প্রধানত বন ও বনজসম্পদের ওপর নির্ভরশীল। কেউ কাঠ কাটে, কেউ গোলপাতা সংগ্রহ করে, কেউ মধু অন্বেষণ করে আবার কেউবা মাছ-কাঁকড়া ইত্যাদি ধরে থাকে।

 

লবণাক্ত পানির কারণে তেমন চাষবাস হয় না বিধায় বনই তাদের জীবন-জীবিকা। এর পাশাপাশি রয়েছে চোরা শিকারির উৎপাত-উপদ্রব, যারা প্রধানত হরিণ ও বাঘ শিকার করে থাকে। সিডর-আইলা-আম্পানের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগও এর জন্য দায়ী। তবে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে বাঘের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো। সেক্ষেত্রে দুদেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় বাঘের সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। মোট কথা, বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে স্থানীয়দের বিকল্প জীবন-জীবিকার পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করতে হবে বাঘ সংরক্ষণে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version