নানামুখী চাপে দেশের অর্থনীতি খাত। টাকার অবমূল্যায়ন, রাজস্ব আয়ে হ্রাস, আমদানি ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সংকট তুলে ধরে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার প্রভাবে এমন সংকট তৈরি হয়েছে। অনেক দেশে প্রবৃদ্ধি কমছে, বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এ চ্যালেঞ্জ উত্তরণের পথ খুঁজছে সরকার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যেই নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
সরকার বলছে, জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার আর কোনো সংকট থাকবে না। আমরা আশ্বস্থ হতে চাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত রেমিট্যান্স গত বছরের চেয়ে ২ দশমিক ০৩ শতাংশ কমে ৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এটাও ইতিবাচক সংবাদ। বৈশ্বিক খাত থেকে সবচেয়ে বেশি আঘাত আসছে অর্থনীতিতে, যা সব দিকে সংক্রমিত হয়েছে। করোনার পর দেশের ভেতর নানা খাতে নেতিবাচক অবস্থা দেখা দেয়।
মূল্যস্ফীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট, খাদ্য সংকট, জ্বালানি সংকট, ডলার সংকট, কোভিড ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। আর দেড় বছর ধরে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগুলোর পর এখন অর্থনীতির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে এসেছে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের চাপ।
এ দুটিতে এখন সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়াতে হবে এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জোগান বাড়াতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধানে আরো জোর দিতে বলা হয়েছে। দেশের মানুষ এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতির চাপ তীব্রভাবে অনুভব করছেন।
গত বছরের আগস্ট থেকে এই চাপের শুরু। এই সময়ের মধ্যে কোনো মাসেই মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ শতাংশের নিচে নামেনি। গত জুলাইয়ে বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।
গত রোববার প্রকাশিত বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা এর আগের মাস জুনে ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা জুনে ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর মানে, জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিঞ্চিৎ কমলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি খানিক বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোও মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভুগেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ভারতের মতো দেশগুলো মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিয়ে ফেলেছে। অনুসরণ হতে পারে দেশগুলো। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশের অর্থনীতির জন্য আগামী ৩ মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংকটগুলো মোকাবিলায় সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। আমাদের অভ্যন্তরীণ শক্তি হলো ১৭ কোটি মানুষ, যার অর্ধেকেরও বেশি উদ্যমী তরুণ-তরুণী, একদল অভিজ্ঞ উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী, যাদের রয়েছে সাহস, উদ্ভাবনী শক্তি এবং সরকারের সময়োচিত নীতি সহায়তা, অবকাঠামো ব্যয় এবং প্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।
প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন, এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখা যাবে না। কথাটাকে শুধু বলার মাঝে না রেখে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরকে কাজে লাগাতে হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য