-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনপদের দিকে নজর দিতে হবে

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনপদের দিকে নজর দিতে হবে

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের ১৫ উপজেলায় টানা বন্যার পানিতে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বান্দরবান ও কক্সবাজার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সারাদেশ থেকে। গত মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা কমে আসে। বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিক হয় দুই জেলার সঙ্গে যোগাযোগ। তবে মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি। চট্টগ্রামের অধিকাংশ সড়ক, মহাসড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে।

 

নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যস্ত সড়কগুলোর কোথাও পিচ উঠে গেছে, কোথাও ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রী ও পথচারীরা। খানাখন্দে গাড়ি আটকে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এমনিতেই দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর একটি বড় অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। এই বন্যা কার্যত মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়।

 

দ্রুত সংস্কার না করা হলে তা যাতায়াতের জন্য বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলা কয়েক দিন ধরে বন্যায় ডুবে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া উপজেলা। জানা গেছে, সাতকানিয়া উপজেলার স্থানে স্থানে ২০-৫০ মিটার করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের বড় একটি অংশ পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের একটি তালিকা করেছে। তালিকা অনুযায়ী এবারের জলাবদ্ধতায় নষ্ট হওয়া সড়কের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। এছাড়া দুই কিলোমিটার নালা-নর্দমা ও দুই কিলোমিটার ফুটপাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো সংস্কারে ৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

 

এবারের টানা বন্যায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলে জলজটে ৩ জেলায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব সড়কের খানাখন্দ ও গর্ত দ্রুত মেরামত না করলে ধীরে ধীরে তা আরো বড় হয়ে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

 

কেবল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বা বান্দরবান নয়, অল্প বৃষ্টিতে ঢাকাও জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। খানাখন্দে ভরা ঢাকার বিভিন্ন সড়ক। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় পানি দীর্ঘ সময় জমে জলজট ও যানজটের সৃষ্টি হয়। সারাদেশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীন সড়কগুলোর ৮ হাজার ৬৬২ কিলোমিটারই ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে।

 

সড়কগুলোর খারাপ অংশের কোথাও পুনর্র্নিমাণ, কোথাও সংস্কার, কোথাও পিচ ঠিক করা আবার কোথাও ডাবল বিটুমিনাস সারফেস ট্রিটমেন্ট (ডিবিএইচ) করা জরুরি বলে মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। সড়কের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা তৎপর না হলে সংস্কার কাজ বাস্তবায়নে বিলম্ব হবে। সরকারকে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কারণে যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়া, যানবাহন গন্তব্যে পৌঁছতে কয়েকগুণ সময় বেশি লাগা, যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হওয়াসহ নানারকম বিপদ-ভোগান্তির অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে।

 

অনতিবিলম্বে দেশের ঝুঁকিপূর্ণ ও বন্যায় নাজুক সড়কগুলো সংস্কার করে নিরাপদ যান চলাচল উপযোগী করতে হবে। সড়ক সংস্কারের নামে জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে সংস্কার কাজ করা হয়। ঠিকাদাররা কোনোরকমে কাজ করে চলে যান। অল্প দিনেই সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আমরা মনে করি, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি ও তদারকি করা জরুরি।

 

ড্রেনেজব্যবস্থার দুর্বলতা ও কাজের গুণগত মান খারাপের কারণে রাস্তাঘাট বৃষ্টি ও বন্যায় দ্রুত নষ্ট হয়। এছাড়া সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যবহৃত উপকরণের গুণগত মান ঠিক না থাকায় সড়ক সংস্কার করলেও বেশিদিন টিকে না- যা খুবই দুঃখজনক। যাতায়াতসহ পণ্য পরিবহনের ভোগান্তি কমাতে অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথের মানসম্পন্ন সংস্কার করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version