-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সর্বজনীন পেনশন

আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সর্বজনীন পেনশন

সর্বজনীন পেনশনের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, ‘এখন থেকে সব শ্রেণি-পেশার নাগরিক পেনশন পাবেন। এর মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য দূর হবে। সরকারপ্রধানের কথায় আমরা আশাবাদী। দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত। তারাই পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই।

 

সচেতন শিক্ষিত সমাজ ভবিষ্যতের কথা ভেবে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশ্যই এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। সরকারপ্রধানকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। তবে লক্ষ্য বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। গত রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জারি করা হয় ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা-২০২৩’।

 

বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি স্কিমের বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ চাঁদা দেয়া সাপেক্ষে মাসিক পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হবে। সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আপাতত ৪ ধরনের স্কিম চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিম, প্রবাসীদের জন্য প্রবাস স্কিম, অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম আর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রয়েছে সমতা স্কিম। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী, এ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে একজন গ্রাহক আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন।

 

নির্ধারিত পরিমাণের চাঁদা পরিশোধের পর গ্রাহক মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী এই পেনশন পাবেন ১৫ বছর। ১৮ বছর বয়সে যেকোনো বেসরকারি নাগরিক এই কর্মসূচিতে যুক্ত হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা মিলবে। যুক্ত হয়ে বয়স যত বাড়বে, আনুপাতিক হারে সুবিধা ততটাই বাড়তে থাকবে। এভাবে গ্রাহক যত টাকা চাঁদা হিসেবে জমা দেবেন তিনি তার জমা দেয়া চাঁদার (কিস্তি) চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ টাকা পেনশন পাবেন। প্রধানমন্ত্রী ইতোপূর্বে দারিদ্র্য দূরীকরণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

 

এ ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, তাদের পেনশনের চাঁদার অর্ধেক পরিশোধ করবে সরকার। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের অঙ্গীকার ছিল। অবশেষে অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে সরকার। দেশে গড় আয়ু ও প্রবীণের সংখ্যা বাড়ায় সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি বাড়ছে।

 

এ অবস্থায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য এটি নতুন কোনো ধারণা নয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ স্কিম চালু করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসসহ অনেক উন্নত দেশে এ স্কিম কার্যকর রয়েছে। বাংলাদেশও স্কিমের যুগে প্রবেশ করল। জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে সর্বসাধারণের জন্য পেনশন স্কিমের উদ্যোগ সরকারের দূরদর্শী চিন্তার একটি সফল প্রতিফলন। এটি দেশের সামগ্রিক সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version