দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর আসছে। কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে আগস্টের শেষ সপ্তাহে জেলার ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় আরেকটি বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এটা আমাদের জন্য শঙ্কার ব্যাপার বৈকি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি।
জানা গেছে, রংপুরের কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার ৪০টি চরাঞ্চলের গ্রামে পানি প্রবেশ করায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘর ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ধানসহ শস্য ক্ষেতগুলো তলিয়ে আছে পানিতে। পানিবন্দি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে ও পাউবো বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রামে ৩ দফা পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদনদী অববাহিকার চর ও নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়।
এর মধ্যে গত জুলাইয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে একটি স্বল্পমেয়াদি বন্যার কবলে পড়ে জেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। আগস্টের শেষে আবারো বন্যা দেখা দিলে এটি জেলায় দ্বিতীয় দফায় বন্যা হবে। ইতোমধ্যে জেলায় ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এদিকে পানি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শুরু হয়েছে নদীভাঙন। হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তা নদীর ক‚ল উপচে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে। এতে ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। চরাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সেখানকার ঘরবাড়ি পানির নিচে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের লক্ষণ এখনো দেখা না গেলেও অচিরেই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদী খনন ও শুষ্ক মৌসুমে পরিকল্পিতভাবে সংস্কার কাজ না করাসহ ওয়াপদা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির জন্য তাদের এমন অনাকাক্সিক্ষত দুর্ভোগ বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
বছর বছর ভেঙে যাওয়া নদীতীর রক্ষা বাঁধগুলোর সংস্কার করা কিংবা স্থায়ীভাবে বাঁধের কাজ না করায় তাদের এই চরম খেসারত দিতে হচ্ছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদনদীর পানি উপচে বন্যার পদধ্বনি কেবল নয়, এমন পরিস্থিতি আমাদের জন্য দুর্ভাবনার। সামনে ভয়াবহ বন্যার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা আমলে নিয়েই সরকারের এখন থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো আমাদের সাধ্যাধীন নয়।
তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নদী ভরাট হওয়ার কারণে যেমন বেড়েছে ভাঙন, তেমনি সামান্য ঢলে দুক‚ল উপচে আকস্মিক বন্যা ঘটায়। বন্যার সময় বাঁধ একটা বড় আশ্রয়স্থল। যেভাবে বাঁধ ভাঙছে, তাতে সব বাঁধকে এখন নিরাপদ আশ্রয় মনে করা যাচ্ছে না। তারপর রয়েছে খাদ্য সংকট।
আমরা আশা করছি, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা দেয়ার সংস্থান করবে সরকার। বিশুদ্ধ পানি, ওষুধপত্র এবং চিকিৎসাসেবাও প্রস্তুত রাখা দরকার। সরকার ও প্রশাসন এ বিষয়ে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য