-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

অনুপ্রবেশকারী খেদানোর সময় এখনই

অনুপ্রবেশকারী খেদানোর সময় এখনই

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মৃত্যুতে কারো কারো শোক প্রকাশের ঘটনা তারই প্রমাণ। অসা¤প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সংগঠনের পদধারী নেতাদের ক্ষেত্রে কেন এমন ঘটনা ঘটল? এটি অনভিপ্রেত। এর দায় ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ নেতারা কি এড়াতে পারবেন? ছাত্রলীগের কর্মকান্ড নিয়ে সরকার এমনিতেই বিব্রত।

 

ছাত্রলীগ নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। কমিটি বাণিজ্য, পদ-পদবি, হল দখল, সিট বাণিজ্য, খুনাখুনি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি, ধর্ষণ, শিক্ষক লাঞ্ছনা, প্রশ্ন ফাঁসসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে সংগঠনটির অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

 

একই সঙ্গে নেতৃত্বের অদক্ষতা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ঐতিহ্য হারাচ্ছে সংগঠনটি। স্বাভাবিকভাবে সরকার বিব্রত হবেই। যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মৃত্যুতে নেতাদের শোক প্রকাশের ঘটনায় নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। এমন অবস্থার জন্য শুধু কি ছাত্রলীগ দায়ী? আওয়ামী লীগ ইসলামবিরোধী শক্তি এমন একটা অপবাদ দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল।

 

ফলে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার সময় ধর্মীয় নানা বিষয়ে কিছুটা ছাড় দিয়ে চলতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সখ্য এর অন্যতম উদাহরণ। এ ছাড়া সারা দেশে মডেল মসজিদ স্থাপন, কওমি শিক্ষাকে স্বীকৃতিদানও রয়েছে। ফলে দলের ভেতর ধর্মভিত্তিক একটা প্রভাব বেড়েছে। সাঈদীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৩০০ পদধারী ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

 

এ ছাড়া মূল দলের পাশাপাশি বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগে সুযোগসন্ধানীদের ঢুকে পড়ার ঘটনা তুলনামূলক বেশি। সরকারি দলে ঢুকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া এবং নিজেদের গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনুপ্রবেশ করছে তারা। এতে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে, ছাত্রলীগকে। ছাত্রলীগ থেকে ‘আগাছা’ নির্মূল করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

তিনি বলেছেন, আগাছা নির্মূল করে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সমুন্নত রাখতে হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বারবার বললেও ছাত্রসংগঠনটির ভ‚মিকা নীরব। আওয়ামী লীগ দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির যেকোনো সংকট ও ক্রান্তিকালে এ দল ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন।

 

আজকের ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের সঙ্গে সংগঠনটির অতীত ঐতিহ্যকে মেলানো যায় না। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে জাতীয় নেতৃত্বে গৌরবময় ভ‚মিকা পালনকারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকে বর্তমান ছাত্রলীগের বিতর্কিত কর্মকান্ডের লজ্জিত ও বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের ঘৃণ্য অপকর্মে দেশের পুরো শিক্ষাঙ্গন অস্থির, অনিরাপদ ও শিক্ষার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

দেশের প্রায় প্রতিটি উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের ত্রাসের রাজত্ব সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ও বিচারহীনতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। সরকারের অনেক ইতিবাচক অর্জন ও সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে ছাত্রলীগের দুষ্কর্ম। এটা ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বোঝেন না, তা নিশ্চয়ই নয়। আওয়ামী নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের অপকর্মের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়ার কথা বলা হচ্ছে বারবার।

 

কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনো প্রতিফলন নেই। তবে সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক মূল্যবোধের অভাব। যাদের মধ্যে এ ঘাটতি রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের এই সংগঠন করার অধিকার নেই।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version