দেশে যখন বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়ে থাকে, তখন সেখানে প্রাধান্য পেয়ে থাকে শিক্ষিত তথা শহর-নগরের তরুণরাই। গ্রামীণ তরুণ বিশেষ করে নারীদের কথা প্রায় শোনা যায় না বললেই চলে। অথচ অধিকাংশ মানুষ এখন পর্যন্ত বসবাস করে থাকেন গ্রামাঞ্চলে এবং তাদের মধ্যে তরুণের সংখ্যা কম নয়। তাদের বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায় না বললেই চলে।
বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় থেকে ঝরে পড়া কিশোর-কিশোরীরা তো নয়ই। এবার তাদের অর্থাৎ গ্রামীণ তরুণদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক। অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া প্রায় ৯ লাখ গ্রামীণ তরুণকে শিক্ষা ও কর্মসংস্থান অর্জনে বিশ্বব্যাংক সরকারের সঙ্গে ৩শ’ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইতোমধ্যে, যা ইতিবাচক অবশ্যই।
বাংলাদেশের প্রায় ২৭ শতাংশ তরুণ। প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ তরুণ, যাদের অনেকেই শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের আওতায় নেই, তাদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ নারী, যাদের অধিকাংশই গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করেন। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্পটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য, করোনা অতিমারিতে বিদ্যালয়গুলো বন্ধের কারণে এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে দেশে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। সেক্ষেত্রে তাদের কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বাড়াতেও সহায়তা করবে প্রকল্পটি। সরকারও তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে বিশেষ করে নারী ও সুবিধাবঞ্চিতদের অর্থনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার নিমিত্ত সরকার বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ১২৩ কোটি ১৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর আওতায় আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন (ফেজ-২) শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যাতে অগ্রাধিকার থাকছে নারীদের প্রশিক্ষণের ওপর। ফলে শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমশক্তির সরবরাহ বাড়বে এবং আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। এর পাশাপাশি সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে দেশব্যাপী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর।
জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রে ২০২১ সালের মধ্যে মাধ্যমিক পরিসরে মোট শিক্ষার্থীর ২০ ভাগ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল, অথচ বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৪ ভাগ পড়াশোনা করছে কারিগরি শিক্ষায়। এ থেকেই বোঝা যায়, খাতটি সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক বৈষম্য ও অবহেলার শিকার।
সরকার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে ইচ্ছুক। তবে এর জন্য অত্যাবশ্যক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তা এক্ষেত্রে গ্রামীণ তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলেই প্রত্যাশা।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য