রপ্তানিতে বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বাড়ছে চালের দাম। ভারত চাল রপ্তানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের চাল ও গমের বড় উৎস প্রতিবেশী দেশ ভারত। নিজেদের বাজার সামলাতে গত মে মাসে ভারত গম এবং জুলাইয়ের মাঝামাঝি আতপ চাল (নন-বাসমতি হোয়াইট রাইস) রপ্তানিতে আরোপ করে নিষেধাজ্ঞা।
সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে সিদ্ধ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, যা কার্যকর থাকবে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত। মিয়ানমারও চাল রপ্তানিতে বেশি দাম চাইছে। দাম বেড়েছে থাইল্যান্ডেও। এরপরও চাল নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল রয়েছে। গত বোরো এবং আমন মৌসুমে ফলন ভালো হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদিত হয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ টন। তাই চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চালের সংকট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা নেই। বিশ্ববাজারে চালের দাম বাড়লেও দেশের বাজার এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। এরপরও ঝুঁকিমুক্ত থাকতে চলতি বছর সরকার সাত লাখ টন গম ও পাঁচ লাখ টন চাল আমদানি করতে পারে। দেশবাসী আগামী আমন মৌসুমের দিকে তাকিয়ে আছে। ফলন ভালো হলে চাল আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। তবে ২০২৪ সালের জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
দেশে গত কয়েক বছরে ধান-পাট-ফলমূল-শাক-সবজি, তরিতরকারি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, চা, চামড়া ইত্যাদির উৎপাদন বাড়লেও ত্রুটি পূর্ণ মার্কেটিংয়ের কারণে কৃষক ও উৎপাদক শ্রেণি প্রায়ই বঞ্চিত হয় ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে। ফলে, একদিকে উৎপাদিত ফসল ও পণ্যদ্রব্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক; অন্যদিকে সেসব পণ্য উচ্চমূল্যে কিনতে হয় ভোক্তা তথা ক্রেতাসাধারণকে।
এক্ষেত্রে ধান-চালের কথা বলা যায়। এসবের দামে প্রায়ই অস্থিরতা ও উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হয়ে থাকে, যার অসহায় শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। অন্যদিকে কৃষক প্রায়ই ধান-চালের ন্যায্যমূল্য পান না, সরকারের ধান-চালের ক্রয়নীতি ও মূল্য নির্ধারণ সত্তেও। মাঝখান থেকে লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগী, ফড়িয়া, চাতাল মালিক, পরিবহন ব্যবসায়ীসহ পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। অনুরূপ প্রায় প্রতিটি কৃষি পণ্য, ফলফুল, শাক-সবজি, মাছ, মাংসে প্রতিফলিত হয়ে থাকে।
বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে এই উৎপাদন আরো বাড়ানো যায়। এর পাশাপাশি নজর দেয়া উচিত বিভিন্ন ও বহুমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং সংরক্ষণে। কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
দেশের মধ্যস্বত্বভোগী চাতালের মালিক, মজুতদার, আড়তদারসহ বাজারের ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের কাছে চালের মজুত যথেষ্ট ও সন্তোষজনক। সরকারের হাতেও যথেষ্ট চাল-গম রয়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে কঠোর মনিটরিং করা হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে সিন্ডিকেট তৈরি করে বৃদ্ধির অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে।
এ অবস্থায় আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের ধান-চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করে বরং বাজার স্থিতিশীল রাখার দিকে নজর দেয়া বাঞ্ছনীয়।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য