আসন্ন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি আবারো সামনে আসছে। মিলতে পারে সুখবর। গত রোববার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।
এ ছাড়া ৫৪টি অভিন্ন নদী ইস্যু আছে, গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদও সামনে শেষ হবে। এসব বিষয় নিয়ে যৌথ নদী কমিশনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এক দীর্ঘমেয়াদি অমীমাংসিত ইস্যু। দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে একমাত্র গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষর হলেও তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।
সর্বশেষ ২০১১ সালে দুই দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে সব প্রস্তুতি নেয়া হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতায় তা সম্পন্ন করা যায়নি। নির্বাচনের আগে দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি সামনে আসা ইতিবাচক বলে মনে করছি। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। গত ১৫ বছরেরও বেশি সময়ে দুদেশের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত বিভিন্ন চুক্তির ফলে সম্পর্কের উচ্চতা ক্রমাগত বেড়েছে। ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধানে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আমরা প্রত্যাশা রাখছি।
খুব স্বাভাবিকভাবেই তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন আসছে বারবার। আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার অধিকার থাকলেও শুকনো মৌসুমে তিস্তার পুরো পানিই ব্যবহার করছে ভারত। তিস্তা দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি, মৎস্য ও খাদ্য ব্যবস্থার জন্য পানির বড় আধার। বিশেষ করে অববাহিকাসংলগ্ন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গ্রামের মানুষ তাদের জীবিকার জন্য এ নদীর ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।
আন্তর্জাতিক আইনি বিধি ব্যবস্থা অনুযায়ী একটি আন্তঃদেশীয় নদী হিসেবে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া বাংলাদেশের অধিকার। ভারতের চাওয়াগুলোর বেশির ভাগ পূরণ হলেও বাংলাদেশের কিছু অপ্রাপ্তি রয়ে গেছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির অনিশ্চয়তা দূর হয়নি। এক দীর্ঘসূত্রতার পাকে পড়ে গেছে এটি। রাজনৈতিক কারণেই তিস্তা চুক্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
তিস্তার পানি ভারতের একতরফাভাবে আটকে দেয়া আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আর তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের কাছে করুণা নয় বরং অধিকার। এ অধিকার থেকে আমাদের আর কতদিন বঞ্চিত রাখবেন? ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত অনেক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে।
বিশেষ করে স্থলসীমান্ত ও সমুদ্র সীমানার মতো জটিল বিষয়গুলো বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু সমাধানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দুদেশের জনগণের প্রত্যাশা- তিস্তা চুক্তি সম্পাদনসহ অমীমাংসিত অন্য বিষয়গুলোরও দ্রæত সমাধান হবে। পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে দেশ দুটির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকুক।
দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক তথা সব ধরনের যোগাযোগ ও সহযোগিতা ক্রমেই জোরদার হোক এমন প্রত্যাশা করছি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য