-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলায় জলবায়ু সম্মেলন

বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলায় জলবায়ু সম্মেলন

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন-২০২৩। শুক্রবার ঢাকায় এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ রোববার সমাপ্ত হবে। সম্মেলনটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ দেখা দিয়েছে। দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিকে ভয়াবহ আখ্যায়িত করে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইসও)।

 

তারা বলেছে, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, পীত রোগ ও জিকা ভাইরাসের মতো মশাবাহিত রোগগুলো দ্রুত এবং দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ছে, যার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী। এ ধরনের সংক্রমণের ঘটনা আসন্ন জলবায়ু সংকটের অশনিসংকেত। জলবায়ুর প্রভাবের কারণে এখন সারা বছরই মশা প্রজনন উপযোগী হয়ে উঠেছে। আর মশা বাড়লে মশাবাহিত রোগবালাই সাধারণভাবেই বাড়তে থাকে।

 

কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনের ওপর ছেড়ে দিয়ে আমরা নিজেরা নিষ্ক্রিয় থাকলে হবে না। মানুষকেই এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলনে ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারক, করপোরেট সেক্টর, উন্নয়ন সহযোগী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিভিন্ন সেক্টরের ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।

 

এ ছাড়া দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ৬০০ জন প্রতিনিধি সরাসরি সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত এবং ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাবের হোসেন চৌধুরী সম্মেলনের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

 

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট, বৈশ্বিক পরিবেশ দূষণ, জল ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু-সংক্রান্ত কার্যক্রমে অর্থায়ন, বিশুদ্ধ বায়ু, শক্তি নিরাপত্তা এবং উল্লিখিত দেশগুলোর জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিয়ে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে ঋতুবৈচিত্র্য লোপ পাচ্ছে। এক ঋতুর সঙ্গে আরেক ঋতুর যে পার্থক্য, তা মুছে যাচ্ছে। আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বাড়ছে। দেশে অসময়ে অনাবৃষ্টি, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়সহ অতি গরম আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে।

 

ফলে বাংলাদেশের অনেক এলাকা প্লাবিত হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আমাদের উপকূলীয় এলাকা এবং সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারসহ অন্যান্য এলাকা। গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের পরিবেশবিরোধী নানারকম ক্রিয়াকলাপের ব্যাপক বৃদ্ধি এবং কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন, মিথেন, ওজোন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাসের উপস্থিতি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বায়ুমন্ডলের নিচের স্তরে উষ্ণতা বেড়ে গিয়ে তা প্রভাবিত করছে পৃথিবীর জলবায়ুকে।

 

বিশেষ করে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের এই পরিবর্তনগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নানা রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা ডেকে আনছে। সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কৌশল প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের কী করা উচিত, বিশ্বের কী করা উচিত। এ বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে সহায়তার জন্য প্রণীত হয়েছে বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০।

 

এটি অত্যন্ত তথ্যবহুল ও বিজ্ঞানভিত্তিক একটি পরিকল্পনা, যা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উচিত এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে কাজ করা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি মোকাবিলার মতো বড় কাজে সাফল্য অর্জন করা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সম্ভব হবে না। আমাদের চারপাশের পরিবেশ সুরক্ষার জন্যও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।

 

বিশেষ করে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ থেকে আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষার জন্যও উদ্যোগ প্রয়োজন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version