-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

পুলিশ সদস্যদেরও জবাবদিহিতা থাকা উচিত

পুলিশ সদস্যদেরও জবাবদিহিতা থাকা উচিত

করোনা সংকট মোকাবিলাসহ দেশে উগ্রবাদ ও জঙ্গি দমনে পুলিশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আইনবিরোধী কর্মকান্ড ও দুষ্কৃতকারীদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে পুলিশের প্রথম ও প্রধান কাজ। কিন্তু কিছু সদস্যের অপরাধে এ বাহিনীর সুনাম নষ্ট হচ্ছে, যা দুঃখজনক। পুলিশ সদস্যদের একাংশের অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়া এবং পুলিশ পরিচয়ে অপরাধ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

সর্বশেষ রাজধানীর শাহবাগ থানায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে। গত শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশের আলোচিত-সমালোচিত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ।

 

গত কয়েক বছরে ৩১তম বিসিএসের এই পুলিশ কর্মকর্তা একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসছে। মূলত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হওয়ার পর থেকেই অনেকটা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। আহতদের স্বজনরা হারুনের চাকরিচ্যুতি ও গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।

 

এ অবস্থার মধ্যে রোববার দুপুরে এডিসি হারুনকে রমনা জোন থেকে প্রত্যাহার করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের কোনো সদস্য অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের বিধান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধের বিচারও করা হয় বিভাগীয় আইনে।

 

এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ‘বিভাগীয় শাস্তির আওতায়’ আনার কথা বলে আড়াল করার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে শাস্তি দেয় পুলিশ। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রায়ই দেখি উদ্দেশ্যমূলক গ্রেপ্তার, অপহরণ, নির্যাতন, খুনের মতো বড় বড় অপরাধকর্মেও দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ত হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে।

 

আবার ডিবি পোশাকে বা ডিবি পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তারের নামে অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটে চলেছে। এ ধরনের ঘটনায় পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ধরনের ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতিই মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি করে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। অপরাধী যেই হোক, তার শাস্তি নিশ্চিত করাই হলো অপরাধ দমনের প্রথম পদক্ষেপ। আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হবে, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার।

 

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, পুলিশ সদস্যদের অপরাধ ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশের অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনতে পুলিশ সুপারদের দেয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। প্রায় সোয়া ২ লাখ সদস্য নিয়ে পুলিশ বাহিনী গঠিত। এর মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ২৫ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসে। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কেন জন্ম নিচ্ছে, সেটা একটা প্রশ্ন।

 

তাদের প্রশিক্ষণে কোনো ঘাটতি আছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। অপতৎপরতা থেকে পুলিশ বিভাগকে মুক্ত করার জন্য শক্তিশালী জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version