আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যেও জঙ্গি তৎপরতা থেমে নেই। জঙ্গিরা নানাভাবে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে আশার কথা, জঙ্গিদের অঘটন পরিকল্পনা আগেই নস্যাৎ করা যাচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বড় সাফল্য। ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র পর তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ (আল-জিহাদি) নামে নতুন আরো একটি জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। সংগঠনটির প্রধানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর এটিইউ বলছে, গত ২-৩ মাস ধরে সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
২০২৪ সালে দেশে বড় হামলার পরিকল্পনা ছিল সংগঠনটির। ইতোমধ্যে তারা ‘সাহেবে-কিরান বারাহ (দারুল জান্নাত)’ নামে সিক্রেট অনলাইন গ্রুপ ব্যবহার করে অসংখ্য সদস্য সংগ্রহ করেছে। তাদের কেউ কেউ নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘আনসার আল ইসলাম’ বা ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ অনুসারী হলেও নিজস্ব পরিকল্পনায় দেশব্যাপী সশস্ত্র হামলা পরিচালনার ছক কষছিল। এ ছাড়া আনসারুল্লাহর শীর্ষ নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানীকে মুক্ত করতে প্রয়োজনে কারাগারে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনটি। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য জসিমউদ্দিন রাহমানী বর্তমানে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন। তার বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হন জুয়েল।
ফলে তিনি নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটি সৃষ্টি করেন। জুয়েল নিজেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। সংগঠনটির অর্থের জোগানদাতা কারা এবং সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা কত- জানতে চাইলে এটিইউ কর্মকর্তা বলেন, সংগঠনটিতে এখন পর্যন্ত ৮০-৯০ জন সদস্য আছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের অর্থদাতা কে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে সংগঠনটির অর্থ সংগ্রহের কাজ করছিলেন রাহুল। এছাড়া রাহুল বোমা তৈরির দায়িত্বেও ছিলেন।
২০১৫ সালে গ্রন্থমেলার সময় লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাসহ কয়েকটি জঙ্গি হামলা ও হত্যার পেছনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি। ওই বছর মে মাসে সরকার এ জঙ্গি দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তৎপরতার খবর প্রথম আসে ২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকান্ডের পর। সংগঠনটির আমির মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী ওই মামলার রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাভোগ করছেন। আনসারুল্লাহ নিষিদ্ধ হওয়ার পর এ দলের সদস্যরা আনসার আল ইসলাম নামে তৎপরতা শুরু করে বলে সে সময় খবর দেন গোয়েন্দারা।
বর্তমান সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। বলা যায়, দেশে জঙ্গি তৎপরতা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগাম তথ্য নিয়ে বেশকিছু জঙ্গি আস্তানায় সফল অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছে। এই তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। জঙ্গি ধরপাকড়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করতে হবে নতুন করে জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়ার ধারাও। পাশাপাশি জঙ্গি দমন অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকা অবস্থায় নব্য জেএমবি বা অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর গোপন তৎপরতা কীভাবে ও কীসের জোরে চলতে পারছে, তা গভীরভাবে জানার চেষ্টা করা দরকার। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন কখনোই পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তাদের জনবল সংকটও কখনো স্থায়ী হয়নি।
আমরা মনে করি, জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধ হলে এদের তৎপরতাও কমে যাবে। জঙ্গিদের যে অর্থ তা খুব একটা দেশের বাইরে থেকে আসে না। অভ্যন্তরীণ লেনদেনের মাধ্যমেই জঙ্গিদের হাতে অর্থ যায়। এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য