গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। এসব পণ্য হলো ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজ। প্রতিটি ডিমের বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ টাকা। ব্যবসায়ীরা এ নিয়ম মানতে নারাজ। ইচ্ছামতো এসব পণ্য বিক্রি করছেন তারা। সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়মের কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। ইতোমধ্যে ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে ভারত থেকে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানির খবরে বাজারে প্রতি পিস ডিম এবার ১২ টাকায় মিলছে। ক্রেতারা প্রতি হালি ডিম ৪৮-৫২ টাকায় কিনতে পারছেন।
কিন্তু এ অবস্থা কতদিন স্থিতিশীল থাকবে, সেটা দেখার বিষয়। কয়েক মাস ধরে ডিমের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। লুটে নিচ্ছে মানুষের টাকা। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। চাহিদা বাড়েনি, উৎপাদনও কমেনি; তবুও ডিমের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। খামারে একটি ডিমের উৎপাদন ব্যয় পড়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে এই ডিম কোনোভাবেই ১২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ প্রায় ২ মাস ধরে একটি ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
অর্থাৎ ডিমপ্রতি ব্যবসায়ীরা ৩ টাকা বেশি লাভ করেছেন। একদিনে দেশে ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস। প্রতি ডিমে ৩ টাকা বেশি মুনাফা করায় ১২ কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। এমন চিত্র আমাদের শঙ্কিত করে। ডিম ছাড়াও বাজারে চাল, পেঁয়াজ, সবজি, মাছ- সব কিছুর দাম বেশি। প্রায় ২ বছর ধরে বাজারের উচ্চমূল্য সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা। এর মধ্যেই দফায় দফায় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজার মনিটরিং না থাকাকে এমন অবস্থার জন্য দায়ী করছে মানুষ। বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নতুন নয়।
সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। সবমিলে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম মেটাতে ভোক্তার হাঁসফাঁস অবস্থা। চাহিদার সঙ্গে দাম যাতে না বাড়ে, সে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো দৃশ্যত কিছু বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়ে থাকে। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বাজারে এরই মধ্যে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে তাদের অভিযানেও ফেরেনি স্বস্তি।
জরিমানা করেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ডিমের বাজার। আমাদের আগের অভিজ্ঞতায় আছে, এসব ব্যবস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। এটা স্পষ্ট যে, করোনা-দুর্যোগে অনেকের আয়-রোজগার কমে গেছে, অনেকেই হয়েছেন কর্মহীন। এখনো বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যাতে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অবশ্য এসব তৎপরতায় তেমন কোনো সাফল্য আমরা দেখি না।
বাস্তব সত্য হচ্ছে, বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ডিমের দাম বাড়াতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। কারণ ডিমের দামে মাছ বা মাংস কোনোটাই কেনা সম্ভব নয়। তাই স্বল্প আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে ভরসা ডিম। কিন্তু এখন তাও নাগালের বাইরে চলে গেল; যা মোটেই কাম্য নয়। আমরা মনে করি, ডিমসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘ্নে রাখার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য