-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

যানজট নিয়ন্ত্রণে চাই যথাযথ পরিকল্পনা

যানজট নিয়ন্ত্রণে চাই যথাযথ পরিকল্পনা

প্রতিবছর ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪০০০ শহরে ব্যক্তিগত (প্রাইভেট) গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হয়। অন্যতম যানজটপ্রবণ শহর ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে ২০০৬ সাল থেকে দিবসটি পালন করে থাকে পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। দেশে প্রয়োজনের তুলনায় গণপরিবহনের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ফলে, দিন দিন বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির চাহিদা। স্বস্তিতে যাতায়াতের লক্ষ্যে মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ায় ক্রমেই বাড়ছে এর সংখ্যা, ব্যবহার ও যানজট। অথচ ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কে জায়গা দখল করে বেশি, যাত্রী পরিবহন করে খুব কম।

 

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, চলতি বছরের আগস্টে সারা দেশে ২৩ হাজার ৮১২টি ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন করা হয়েছে। এ হিসেবে প্রতিদিন ১০০টি ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন করা হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরীতেই নিবন্ধন করা হয়েছে ১১ হাজার ৩৩৪টি। গত ১০ বছরে সারা দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন করা হয়েছে ৯ লাখ ১ হাজার ১৪০টি। রাইড শেয়ারিং নীতিমালা অনুমোদনের পর রাজধানীতে বেড়েছে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও। ঢাকা মহানগরীতে ১০ লাখ ৭৮ হাজার ৪৯৭টি নিবন্ধনকৃত মোটরসাইকেল চলাচল করে। পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার পাশেই পার্কিং করার ফলে সৃষ্টি হয় প্রচন্ড যানজট।

 

মহানগর এলাকায় টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা, পথচারী ও সাইকেলবান্ধব গড়ে তোলার এখনই সময়। ইতোমধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির বহন ক্ষমতা নির্ধারণ করে যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করাসহ ১২ দফা প্রস্তাবের কথা জানিয়েছে কয়েকটি বেসরকারি সংগঠন।

 

বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমানে ঢাকায় প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত ২ থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে। এই স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতের জন্য সাইকেল ও হেঁটে নিরাপদে চলাচলের পরিবেশ তৈরি এবং বেশি দূরত্বের জন্য গণপরিবহন নিশ্চিত করা গেলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। একই সঙ্গে গাড়ির লাইসেন্স নম্বরের জোড়-বেজোড় সংখ্যা অনুযায়ী চলাচলের দিনও নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে।

 

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মেট্রোরেল ও সদ্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আংশিক চালু হলেও রাজধানীর যানজট কমেনি। বরং কিছু জায়গায় বেড়েছে। ঢাকার বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পও চলছে ধীরগতিতে। উন্নত বাস সার্ভিস ও পথচারীবান্ধব শহর গড়তে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ অপর্যাপ্ত। তাই ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে টেকসই গণপরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা আবশ্যক।

 

ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ এবং টেকসই পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মহানগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করার পর্যায়ক্রমিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং পথচারীবান্ধব ফুটপাত নির্মাণ এবং হাঁটার উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে বহু মাধ্যমভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে চাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঐকান্তিক সদিচ্ছা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version