-->
সম্পাদকীয়

হাওর হলো সাগরসদৃশ জলরাশির বিস্তৃত প্রান্তর

হাওর হলো সাগরসদৃশ জলরাশির বিস্তৃত প্রান্তর

হাওর হলো সাগরসদৃশ জলরাশির বিস্তৃত প্রান্তর। দেশের উত্তর-পূর্ব অংশে জলাভূমি বাস্তুতন্ত্র, যা একটি অগভীর জলাভূমি। বছরের প্রায় ৭ মাস হাওরগুলো পানির নিচে অবস্থান করে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে সেখানে সরু খাল তৈরি হতে পারে। আবার মৌসুমের শেষ দিকে এটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যেতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে হাওরের প্রান্তর জুড়ে গজায় ঘাস। তখন এটি বিচরণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গবাদি পশুর। একইসঙ্গে হাওরে আসা পানি রেখে যায় প্রচুর পলিমাটি, যা ধান উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি জেলাজুড়ে বিস্তৃত হাওরাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্য কোনো অঞ্চলের তুলনা করা ঠিক হবে না। হাওরাঞ্চলের কেন্দ্রভ‚মি হচ্ছে সুনামগঞ্জ জেলা। এরপরই আসে কিশোরগঞ্জের নাম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হাওরের জীবন ও জীবিকা। বর্ষাকালে হাওরের সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে। এর অপার সৌন্দর্য এবং রহস্য নিয়ে বাংলা সংগীত ও সাহিত্য ভান্ডারে লুকিয়ে রয়েছে নানারকম মহিমা।

 

কিন্তু ঐ যে, ‘সবকিছু চলে যায় নষ্টদের দখলে’! এখন হাওরের দিকে চোখ পড়েছে একশ্রেণির শিল্পদস্যুর। তারা শিল্পোন্নয়নের নামে গ্রাস করতে চলেছে হাওরাঞ্চল। যে কারণে এর বুকে চলছে নানারকম অত্যাচার। এর ফলে ভবিষতে কী হবে, সে বিষয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। টাকার গন্ধে উন্মাদ সেসব মানুষের একটাই চাওয়া কীভাবে হাওরের বুকে দখল নেয়া যায়।

 

এখন সেখানে জমি কেনাবেচার হিড়িক লেগেছে। যেহেতু একশ্রেণির শিল্পপতি হাওর উদরস্থ করতে তৎপর, সেই কারণে শুরু হয়েছে জমি নিয়ে লুকোচুরিও। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে গ্রাস করতে তারা উদ্যত। হাওর জীবনের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার প্রতি কোনো ধরনের দায়বদ্ধতা নেই তাদের। এখন শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে।

 

এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। যদিও যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হাওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

 

কিন্তু কিছুতেই তারা থামছে না। এ ব্যাপারে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়।

 

একদিকে চলছে জলাভূমি বাস্তুতন্ত্র হাওরকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা, অন্যদিকে হাওরাঞ্চলে জীবন ও জীবিকাকে ফেলে দেয়া হয়েছে হুমকির মুখে। এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানই কেবল সাধারণ মানুষকে নিশ্চিন্ত করতে পারে। রক্ষা করতে পারে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে। এই থাবা রুখতে না পারলে, ভয়াবহ পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version