-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

পদ্মায় রেল সেতু: দক্ষিণের জন্য আরও সুসংবাদ

পদ্মায় রেল সেতু: দক্ষিণের জন্য আরও সুসংবাদ

যান চলাচল শুরুর এক বছর পর পদ্মা সেতুতে কাক্সিক্ষত ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ছাড়াও ট্রেনের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন সহজ হবে, দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে। নানা বাধা পেরিয়ে নির্মিত হয় দেশের দীর্ঘতম সেতুটি। ২০২২ সালের ২৫ জুন সেতু উদ্বোধন হয়েছে। পরদিন থেকে শুরু হয় সড়কপথের যান চলাচল।

 

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা-মোংলার মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতুতে কনটেইনারবাহী মালগাড়ি চলতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরের মতো মোংলাতেও ঢাকা থেকে সরাসরি রপ্তানি পণ্য পাঠানো যাবে। ভারতের সঙ্গে রেলপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল হবে। এই সেতুতে যাত্রীবাহী ট্রেন ঘণ্টায় ১৬০ ও পণ্যবাহী ট্রেন ১২৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। ব্রডগেজ ও মিটার গেজ উভয় ধরনের ট্রেন চলাচল করতে পারবে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে আপাতত রাজধানীর কমলাপুর থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলবে। ভাঙ্গা থেকে পরে এই ট্রেন রাজবাড়ী হয়ে রাজশাহী ও খুলনায় যাবে।

 

এতে করে যোগাযোগ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। পদ্মা সেতু স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন। স্বাধীনতা-উত্তর সেরা মাইলফলক, যা চমকে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। এ গৌরবের অংশীদার আমরাও। পৃথিবীতে অনেক সেতু হয়েছে, সামনেও হবে; কিন্তু পদ্মা সেতু আলাদা কেন? প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য বাদ দিয়ে পদ্মা সেতু পশ্চিমা সভ্য দেশগুলোর মুখে থাপ্পড়। কারণ তারা পদ্মা সেতুকে রুখতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্র করে।

 

২০১১ সালে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরেও যায় বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ সরকারও বিশ্বব্যাংককে আর এ নিয়ে কোনো অনুরোধ করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন আমাদের টাকায় হবে পদ্মা সেতু। সমালোচনায় জল ঢেলে হাসিনা শক্ত হাতে হাল ধরলেন পদ্মা সেতুর, সফলও হলেন। একজন সুযোগ্য নেতা দেশকে, জনগণকে কতখানি সামনে নিয়ে যেতে পারেন, তার উদাহরণ শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে একে একে সেতু হয়েছে। মানুষের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। পণ্য পরিবহন গতি পেয়েছে। বড় বাধা ছিল পদ্মা পারাপার। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সে দুঃখ ঘুচে গেল।

 

ধারণা করা হচ্ছে, সেতুটি দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার পথ এখন চার ঘণ্টায় নেমেছে। অন্তত ১৯ জেলার মানুষ সরাসরি সুফল পাচ্ছেন। কেবল নৌপথ নয়, আকাশপথের যাত্রীরাও এখন সড়ক পথ বেছে নিয়েছেন। এখন ট্রেন চালু হওয়ায় রেলপথও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

 

বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে আত্মমর্যাদাশীল একটি জাতি হিসেবে তার বিকাশে পদ্মা সেতু হবে আত্মমর্যাদা ও অর্থনীতির ভিত রচনার প্রতীক। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের অনাগত স্বপ্ন পূরণের স্বপ্নসারথি। এ দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে ও জাতীয় একতা বৃদ্ধিতে এই সেতু মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version