-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

জনগণকে স্বস্তি দেয়াই গণতন্ত্রের লক্ষ হওয়া উচিত

জনগণকে স্বস্তি দেয়াই গণতন্ত্রের লক্ষ হওয়া উচিত

গত ২৮ অক্টোবর সংঘাত ও হতাহতের মধ্য দিয়ে আগামীতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠার ইঙ্গিত মিলেছে। ওই সূত্র ধরেই বিএনপি তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। আমরা জানি, বৈশ্বিক সংকট দেশে দেশে নানামুখী বৈরী ছায়া ফেলেছে। আমরাও এর বাইরে নই। জনজীবন এমনিতেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলেছে।

 

আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, যেকোনো সংকট পুঁজি করে অশুভ মহল নিজেদের আখের গোছাতে কিংবা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে জনজীবনে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এর মধ্যে চলমান রাজনৈতিক সংকট বিশেষ করে অবরোধ পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলবে, তা সন্দেহের বাইরে রাখার অবকাশ নেই। আমরা ইতঃপূর্বে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে রাজনৈতিক সব পক্ষের কাছে আহব্বান জানিয়েছি, সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।

 

সেই সময় পেরিয়ে আমরা যখন এই সম্পাদকীয় লিখছি, তখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির চিত্র আরও প্রকটভাবে দৃশ্যমান। আমরা বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করার ব্যাপারে অবরোধের ডাক দেয়া রাজনৈতিক মহলের নীতিনির্ধারকদের প্রতি বিশেষ আহব্বান জানাই।

 

আমরা জানি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি কথাটি আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত। এই সত্য অস্বীকারের পথ নেই যে, দেশের সাধারণ মানুষ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা সুসংহত করার জন্য ইতোমধ্যে কম ত্যাগ স্বীকার করেনি। আমরা যদি পেছনে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, নব্বই পরবর্তী অধ্যায়ে দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ব্যাপারে সংগতই উচ্চ প্রত্যাশা করেছিল।

 

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, জনগণের সেই প্রত্যাশা বৃত্তবন্দিই রয়ে গেছে। আমাদের সামনে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কিংবা আন্দোলনের নামে আগুনসন্ত্রাসের ভয়াবহ দুঃসহ স্মৃতি ফের সামনে ভেসে উঠেছে। ইতোমধ্যে আগুনসন্ত্রাস সহিংসতায় হতাহতের যে মর্মস্পর্শী চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে, তা কোনোভাবেই গণতন্ত্র সমর্থন করে না। স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিশেষ করে রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জননিরাপত্তাহীনতার যে প্রেক্ষাপট রাজনৈতিক স্বার্থে কখনো কখনো উদ্ভব হয়, এর চূড়ান্ত পরিণতি কতটা মর্মন্তুদ হয় তাও আমাদের অভিজ্ঞতায় মূর্ত।

 

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত-সহিংসতা, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চলতে থাকলে অর্থনীতির সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠবে এবং এর ফলে সাধারণ মানুষকেই সবচেয়ে বেশি ভুগতে হবে। আগেই উল্লেখ করেছি, সংকটকে পুঁজি করে অসাধু মহল নিজেদের আখের গোছাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির অজুহাতে নিত্যপণ্যের বাজারে আরও উত্তাপ বাড়ার পাশাপাশি জনজীবনে স্বাভাবিকতা বিনষ্টে অসাধুদের কারসাজির অপছায়া আরও বিস্তৃত হবে, এ ধারণাও অমূলক নয়।

 

এমন প্রেক্ষাপটে রাজনীতির নীতিনির্ধারকদের, বিশেষ করে যারা হরতাল-অবরোধের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন বৈরী কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের কথা বলেন, তাদের অবশ্যই এই উপলব্ধিতে আসতে হবে যে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনজীবনে স্বস্তির পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আমরা কোনোভাবেই দেশের রাজনৈতিক সহিংসতার কদর্য অধ্যায়ে আর ফিরে যেতে চাই না। এই পরিবেশ-পরিস্থিতি নিশ্চিত করার দায় সরকারসহ সব রাজনৈতিক পক্ষের। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সংকট জনমনে গভীর উদ্বেগের রেখাপাত করেছে তার নিরসনে সর্বাগ্রে জরুরি সহনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ঐকমত্য।

 

আমরা অবশ্যই রাজনীতি চাই, কিন্তু রাজনৈতিক কিংবা গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে আন্দোলনের সহিংস ও ভীতিকর রূপ কোনোভাবেই দেখতে চাই না। আমরা জনজীবনে স্বস্তির পাশাপাশি জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ব্যাপারে সরকার তো বটেই, একই সঙ্গে রাজনৈতিক সব পক্ষের দায়িত্বশীলতা দেখতে চাই।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version