দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি বর্তমানে নানা অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর নেপথ্যে ডলার সংকট একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস রপ্তানি, রেমিট্যান্সপ্রবাহ, বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক অনুদান-সব ক্ষেত্রেই মন্দাভাব বিরাজ করছে। তীব্র ডলার সংকটে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ও অন্যান্য খাতের ব্যয় কমছে না।
ফলে সার্বিকভাবে এখনো বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। এতে রিজার্ভ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। উলটো রিজার্ভ থেকে ডলার দিয়ে মেটাতে হচ্ছে বৈদেশিক দায়। এতে রিজার্ভ ক্রমেই কমে যাচ্ছে। রিজার্ভের ক্ষয় রোধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এজন্য প্রথমেই মুদ্রা পাচার বন্ধ করতে হবে। হুন্ডি বন্ধ করা সম্ভব হলে বাড়বে রেমিট্যান্সপ্রবাহ। রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য নিতে হবে বহুমুখী পদক্ষেপ। বিদেশে পড়ে থাকা রপ্তানি আয় এবং পাইপলাইনে আটকে থাকা অর্থ দ্রুত দেশে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুফল না পাওয়া গেলে আগামী দিনে ডলার সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত রপ্তানি আয়। মোট বৈদেশিক মুদ্রার ৭০ শতাংশই আসে রপ্তানি খাত থেকে। দ্বিতীয় প্রধান খাত হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। এ খাত থেকে আসে ২৮ শতাংশ। বৈদেশিক বিনিয়োগ, ঋণ ও অন্যান্য খাত থেকে আসে ২ শতাংশ। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবকটি খাতেই মন্দাভাব বিরাজ করছে। জুনে সর্বশেষ রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল।
এরপর থেকে তা নিুমুখী-জুলাইয়ে ৪৫৯ কোটি, আগস্টে ৪৭৮ কোটি এবং সেপ্টেম্বরে ৪৩১ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে রপ্তানি বেড়েছিল সাড়ে ১৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। একশ্রেণির অসাধু রপ্তানিকারক বিদেশ থেকে অর্থ ফেরত আনছেন না। এভাবে চলতে থাকলে ডলার সংকট আরও বাড়বে।
সম্প্রতি বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিট্যান্সপ্রবাহে কেন এর প্রভাব পড়ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগেও (এফডিআই) চলছে মন্দা। ২০২১-২২ অর্থবছরে এফডিআই এসেছিল ১৮৩ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে ১৬১ কোটি ডলার এসেছে। রিজার্ভের ক্ষয় কমাতে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়, যা এখন আরও কঠোর হয়েছে। এ খাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে রিজার্ভের ক্ষয় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে রেমিট্যান্স আয়ও নিুমুখী।
জুনে সর্বশেষ রেমিট্যান্স আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে ২২০ কোটি ডলার এসেছিল। এরপর থেকে তা ২০০ কোটি ডলারের নিচে রয়েছে-জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি, আগস্টে ১৬০ কোটি এবং সেপ্টেম্বরে ১৩৪ কোটি ডলার এসেছে। হুন্ডিতে ডলারের দাম বেশি পাওয়ায় এবং ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য না হওয়ায় হুন্ডিতে রেমিট্যান্স বেশি আসছে। বৈশ্বিক মন্দায় প্রবাসী কর্মীদের আয় কমার কারণেও রেমিট্যান্স কমেছে বলে মনে করা হয়। রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। ডলার সংকট নিরসনে দুর্নীতি রোধে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য