-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বাঁধা কোথায়?

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বাঁধা কোথায়?

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের উদ্যোগের কথা বারবার শোনা গেলেও তা বাস্তবায়নে আলো দেখা যায়নি। সর্বশেষ বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবাসেই ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ১৬টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জেনেছিলাম। এরপর কি অগ্রগতি হয়েছে? প্রবাসীরা আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। প্রতি বছর প্রায় ১৮ মিলিয়নের বেশি টাকা দেশে আসছে। প্রতি বছর এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়ছে।

 

প্রবাসীরা অনেক সময় বিদেশে গিয়ে নানা অসুবিধায় পড়েন। ফলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নিয়ে অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়। প্রবাসীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ভোগান্তি থেকে মুক্ত করতে সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছি। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ১২ কোটি ভোটারের মধ্যে দেড় কোটি ভোটার বর্তমানে কর্মসূত্রে বাস করছেন প্রবাসে, যা মোট ভোটারের প্রায় ১৫ শতাংশ। এদের সবারই বৈধ পাসপোর্ট থাকার পরও অনেকের নাম নেই ভোটার তালিকায়। কারো কারো নেই জাতীয় পরিচয়পত্রও (এনআইডি)।

 

আবার ভোটার হলেও প্রবাসে থাকায় রাখা হয়নি ভোট দেয়ার সুবিধা। অথচ এরা সবাই ভোট দিতে এবং দেশে যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে আগ্রহী। প্রবাসীদের দাবি ছিল, প্রবাস থেকেই যাতে জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু পূর্বাপর সরকারগুলো তাদের আশার ছলনে ভুলিয়ে রাখার কৌশল নিয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিসরে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে এ মুহূর্তে অগ্রাধিকারমূলক উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। কিছুদিন আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠককালে অনেক রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে দাবি ও সুপারিশ দাখিল করেছিল। সরকারের মনোভাবও ইতিবাচক। সুতরাং এই আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়ন করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।

 

জানা যায়, প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবাসেই ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলতি বছরের ৩১ মে থেকে আবুধাবি দূতাবাসে ও ১২ জুন দুবাই কনস্যুলেটে পরীক্ষামূলকভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে ১৫টি দেশের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর প্রস্তাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও ইতালির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়া গেছে।

 

এখন দায়িত্ব নিয়ে কাজগুলো এগিয়ে নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। প্রবাসীরা মনে করছেন, তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি দীর্ঘসূত্রতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে রয়েছে। প্রবাসীরা যাতে প্রবাসে থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নিন।

 

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এ ক্ষেত্রে আইনি কিংবা কারিগরি ঘাটতির দোহাই দেয়ারও সুযোগ নেই। বিশেষ করে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরবসহ যেসব দেশে বেশি সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন, সেখানে তাদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হতে পারে। সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিলে প্রবাসীরা তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version