নতুন করে গত দুদিন গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মজুরি বোর্ড ঘোষিত সর্বনিম্ন মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুরে ফের আন্দোলনে নেমেছেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের। গত বুধবার শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আঞ্জুয়ারা খাতুন নামে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আরেক শ্রমিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর আগে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে দুজন শ্রমিক মারা গেছেন। এ খাতে এমন অস্থিরতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নৈরাজ্য অস্থিরতা পোশাক খাতের জন্য শঙ্কার বিষয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার ঘোষণা দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
পোশাক শ্রমিকদের প্রতিনিধি এবং মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের আলোচনার পর এই ঘোষণা দেয়া হয়। মজুরি বৃদ্ধির এই ঘোষণাকে শ্রমিকদের একটা পক্ষ মেনে নিলেও আরেকটি পক্ষ তা মেনে নেয়নি। বরং বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন তারা।
শ্রমিকরা বলছেন, বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই মজুরি নির্ধারিত হয়নি। ১২ হাজার ৫০০ টাকায় একজন শ্রমিকের পরিবার চলাটা অসম্ভব।
আইন অনুযায়ী, বোর্ডের মজুরি নির্ধারণের ঘোষণার পর ১৪ দিনের মধ্যে সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করতে হয়। এরপরের ১৫ দিনের মধ্যে মজুরি নিয়ে আপত্তি তোলার সুযোগ রয়েছে। শ্রমিকদের আরেকপক্ষ বলছে, বৈশ্বিক মন্দাসহ সবকিছু বিবেচনায় কাক্সিক্ষত আশা পূরণ না হলেও মন্দের ভালো হিসেবে এটি মেনে নেয়া যেতে পারে। কারখানা শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। তৈরি পোশাক খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানিকারক বাংলাদেশ।
অথচ শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম মজুরি পান এ দেশের শ্রমিকরা। এটা এক ধরনের নৈরাজ্য। বেতন-ভাতার দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বারবার রাস্তায় নামতে দেখা যায়।
মালিকপক্ষের মতে, এ মুহূর্তে সাড়ে ১২ হাজারের বেশি মজুরি দেয়ার মতো সামর্থ্য নেই তাদের। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করার জন্য বহিরাগতরা উসকানি দিচ্ছে বলে মালিকপক্ষ অভিযোগ করছে। অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় দেশের তৈরি পোশাকশিল্প আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
অনেক প্রতিকূলতা এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রগতির পথে। দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে পোশাকশিল্পের কোনো বিকল্প নেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশ থেকে যে রেমিট্যান্স আসছে তার অন্যতম খাত হলো গার্মেন্টস শিল্প। প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক অর্থ আয় করছে।
যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। সময়ের প্রয়োজনে অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল ভোক্তা চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের বহুমুখীকরণ বা বৈচিত্র্যসাধন, কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হলে পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। তবে শ্রমিকদের হক বঞ্চিত করে নয়। আমরা মনে করি, শ্রমিকদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সুরাহা করা উচিত।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য