-->
সম্পাদকীয়

চিনি নিয়ে কারসাজি কাম্য নয়

চিনি নিয়ে কারসাজি কাম্য নয়

চিনি এক প্রকার সুমিষ্ট পদার্থ ও খাদ্য উপকরণ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কারসাজির হোতারা এই সুমিষ্ট পদার্থও বহুবার তেতো করে তুলেছেন অতি মুনাফার অভিপ্রায়ে। মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কতটা কঠিন করে তুলেছে, এর প্রায় নিত্য খবর মেলে সংবাদমাধ্যমে।

 

চিনি আমদানিতে সরকার শুল্ক কমানোর পরও বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না, উপরন্তু কেন ফের বাড়তে শুরু করেছে চিনির দাম তা বিস্ময়কর। সরকার যখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে তখন অসাধু মিলমালিক ও চিনি আমদানিকারকদের অপকৌশল সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে।

 

আমদানিকারকরা বরাবরের মতোই চিনির দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে নানা অজুহাত দাঁড় করিয়েছেন। একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়ায় বেশি দাম আদায়ের জন্য সিন্ডিকেট করে চিনি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন মিলমালিকরা! প্রতি মাসে দেশে চিনির গড় চাহিদা প্রায় ১ লাখ ৬৫ টন।

 

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১১ নভেম্বর পর্যন্ত পূর্ববর্তী ছয় মাসের প্রতি মাসে গড়ে চিনি আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার টন। সেই হিসেবে চিনির মজুদ এবং সরবরাহে কোনো অস্বাভাবিকতা দৃশ্যমান হওয়ার কথা নয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকলেও এই অঞ্চলে চিনির বাজার অস্থিতিশীল।

 

চিনির দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা আমদানিকারক ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করলেও আমদানিকারকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতি, বন্দরে সময়মতো পণ্য খালাস না হওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার মানের অবমূল্যায়ন এসব দায়ী। কিন্তু চিনি আমদানিতে সরকার শুল্ক কমানোর পরও কেন এর ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান না হয়ে উল্টো বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে? সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা অকপটেই স্বীকার করছেন।

 

কিন্তু সিন্ডিকেটের হাত কি আইনের হাতের চেয়েও লম্বা? কেন সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব স্বীকার করা সত্ত্বেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলো তা ভাঙতে পারছে না এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার দায়ও তাদের ওপরই বর্তায়। সরকারের উচিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোকে নবায়ন ও বহুমুখী করা। কেবল চিনি উৎপাদন করে মিলগুলো টিকিয়ে রাখা কতটা কঠিন বিদ্যমান বাস্তবতাই এর সাক্ষ্যবহ।

 

আমরা নবায়ন ও বহুমুখীকরণের গুরুত্ব দিই এ কারণে, চিনিকলের উপজাত চিটাগুড় ও ঝোলাগুড় থেকে বিপুল পরিমাণ মিথাইল ও ইথাইল অ্যালকোহল আহরণ করা সম্ভব এবং এই অঞ্চলের দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কায় তা রপ্তানিরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া ওষুধশিল্পেও এর বিপুল ব্যবহার আছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিলগুলোর উৎপাদন বাড়ালে শুধু আমদানিনির্ভরতাই হ্রাস পাবে না, চিনিকলের উপজাত রপ্তানি করেও অর্থনীতিতে বাড়তি জোগান দেয়া সম্ভব।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version