শুক্রবার মিধিলার আঘাতে সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে। উপকূলীয় কোনো কোনো স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; নষ্ট হয়েছে জমির ফসল ও শাকসবজি। জানা গেছে, ৪ লাখ হেক্টর জমির পাকা আমন ধান এখন পানিতে নিমজ্জিত। প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির শাকসবজি, ডাল, সরিষা এসব জাতের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হেক্টর জমির ধান। অগ্রহায়ণ মাস শুরু হয়েছে। মাঠে মাঠে দোলছে সোনালি ধান। ক’দিনের মধ্যেই গ্রামে গ্রামে আমন ধান কাটার ধুম পড়ার কথা। কৃষকের দুচোখ ভরা সেই স্বপ্ন এখন পানিতে নিমজ্জিত। পাকা ধান, সবজি ক্ষেত সব নষ্ট হয়ে কৃষকের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর সারাদেশে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না। আর এতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ঘূর্ণিঝড় মিধিলি সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল সে অনুযায়ী তা শক্তিশালী ছিল না। তবে এর প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া ডাল, সরিষা এবং শীতকালীন সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে এসব ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব হয়তো আমরা জানতে পারব। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা যথাযথভাবে নির্ধারণে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। মিধিলির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে যেসব হতদরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, জমির ফসল নষ্ট হয়েছে, তারা পথে বসতে বাধ্য হবেন। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।
মিধিলিসহ এ বছর তিনটি ঘূর্ণিঝড় দেশের উপকূলে আঘাত হানল। ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার মূল কারণ বঙ্গোপসাগরের অতিরিক্ত উষ্ণতা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এটা ঠিক যে, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে সক্ষমতা অর্জন করেছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সক্ষমতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গত ১০ বছরে দেশে মোট ৭টি বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। আইলা, সিডরের সময় বাংলাদেশের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। সে সময় ক্ষয়ক্ষতি বেশি ছিল, কারণ আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু এখন বাংলাদেশ অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে।
এ কথা অনস্বীকার্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমবেশি আসবেই। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মানুষের চেষ্টায় যে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, সন্দেহ নেই। তবে মিধিলির আঘাতে ৭ জন মানুষের প্রাণ গেছে- এটাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাহত কীভাবে আরো কমানো যায় সে দিকেও নজর দিতে হবে। মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এখন প্রয়োজন বৃষ্টির পানিতে ফসল ডুবে গিয়ে এবং অন্যান্য কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানো। যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা জরুরি ভিত্তিতে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য