দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারদের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিলে কোনো পরিবর্তন না আনলে নতুন করে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে সাংবিধানিক সময়সীমার বাইরে তফসিল পরিবর্তন করা হলে আওয়ামী লীগ তা মানবে না বলে জানিয়েছেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ অবস্থায় আমরা ধরে নিতে পারি, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না অর্থাৎ জনগণের একটা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অংশকে প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল নির্বাচনের বাইরে থাকছে। এটি গণতন্ত্রের জন্য মোটেও সুখবর নয়। আমরা সবাই চেয়েছিলাম একটা অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচন আর অংশগ্রহণমূলক থাকছে না।
ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেছেন, বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক, বিশ্বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় ইইউ। প্রশ্ন উঠতে পারে, বিএনপিবিহীন নির্বাচন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা। এটা ঠিক, আগামী নির্বাচনে অওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল অংশ নিতে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে অংশ না নেয়া দলের সংখ্যাও কম নয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো যেহেতু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না, সেক্ষেত্রে এখন করণীয় কী? নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে যেসব দল অংশ নিচ্ছে, সত্য এই যে, জনগণের কাছে সেই দলগুলোর তেমন গুরুত্ব নেই, যেমনটা গুরুত্ব রয়েছে বিএনপির। আমরা জানি না নির্বাচনের তফসিল পরিবর্তন করা হবে কিনা এবং তা করা হলেও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা।
বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হবে সেই ক্ষত পুষিয়ে নিতে নির্বাচনটা যাতে কারচুপিমুক্ত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কমিশন বড়জোর নির্বাচনে অংশ নিতে অনিচ্ছুক দলগুলোর প্রতি আহব্বান জানাতে পারে। কমিশন সেটা করেছে। সুতরাং এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের বড় কোনো দোষ ধরার সুযোগ নেই। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, নির্বাচন সহিংস হতে উঠতে পারে। কারণ অনেক নির্বাচনী আসনে একই দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করা হবে মর্মেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, নির্বাচনপূর্ব প্রতিটি ঘটনা সঠিক পর্যবেক্ষণে রেখে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া এবং নির্বাচনের দিন যাতে কোনো অঘটন না ঘটে, তা নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিশ্চয়ই নির্বাচন কমিশনের নয়। এ কাজটি করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকেই।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য