-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

বোমা হামলা থেকে গাজাবাসীর নিস্তার মিলবে কবে?

বোমা হামলা থেকে গাজাবাসীর নিস্তার মিলবে কবে?

গাজায় আবারো জোরেশোরে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির পর তিন দিন ধরে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। নির্বিচার হামলার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না দক্ষিণ গাজার মানুষও। বর্বর বাহিনীর অব্যাহত বোমাবর্ষণে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ৭ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

 

মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল ও বেসামরিক মানুষের বাড়িঘর সব জায়গায় হামলা চালাচ্ছে। গাজার অন্তত ১৩০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা হয়েছে। হামলায় গাজার ২০টি হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী ৩১ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ পর্যন্ত ২৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। এদিকে হামলায় আহত ব্যক্তিরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন।

 

ফলে গাজায় ভয়াবহ এক সংকট তৈরি হয়েছে, যা নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। গাজায় ইসরায়েলের টানা ৪৭ দিনের হামলার পর গত ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এ যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। দুই দফায় মোট তিন দিন বাড়ানো হয় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে আন্তর্জাতিক চাপ ও হামাসের পক্ষ থেকে নতুন করে প্রস্তাব দেয়া সত্তেও রাজি হয়নি ইসরায়েল।

 

শুক্রবার সকাল থেকে গাজায় আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধ শুরুর পর দখলদার ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। যাদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি হামলায় প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে শিশু মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের উত্তাপ ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে।

 

বদলে দিচ্ছে রাজনীতি-কূটনীতির নানা হিসাব-নিকাশ। কী হবে এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ, তা নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের দামামা বাজছে। গোটা অঞ্চলেই উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে, সরগরম রাজনীতির অঙ্গন। কোনো কূটনৈতিক তৎপরতাই সংঘাত বন্ধে কাজে আসেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসন বন্ধে পাঁচটি সুপারিশ পেশ করেছেন। ৯ নভেম্বর রিয়াদে অনুষ্ঠিত ৮ম বিশেষ ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি এ পরামর্শ দেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের একতরফা যুদ্ধ বন্ধে অবিলম্বে ‘যুদ্ধবিরতির’ আহব্বান জানানো দরকার। এই যুদ্ধ অন্যায্য এবং এটি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নির্মম লঙ্ঘন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজা জ্বলছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। বিধ্বস্ত গাজার আটকে পড়া বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণের অবিচ্ছিন্ন, দ্রুত এবং নিরাপদ সরবরাহের জন্য অবিলম্বে একটি মানবিক করিডোর খোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করেছেন।

 

বিশ্বনেতারা প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে পারে। তুরস্ক, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশসহ সব রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনি সমস্যার একটি দ্বিরাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাধানের কথা বলেছে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতেও এটিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তি ও স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ যুদ্ধ ও সংঘাতের অবসান ঘটবে না।

 

এ ক্ষেত্রে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই একমাত্র পথ। যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে শান্তি আলোচনা শুরু করা জরুরি বলে মনে করছি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version