আজ থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ধরতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীসহ সারাদেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের নজরদারির পাশাপাশি চলবে বিশেষ অভিযান। এ বিষয়ে প্রতিটি থানার ওসিকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এমন অভিযান জরুরি।
সাম্প্রতিক কালে হরতাল, অবরোধে ব্যবহৃত পেট্রোলবোমা, অগ্নিসন্ত্রাস ইত্যাদি কার্যক্রম প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উদ্ধারও হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র ও সরঞ্জাম। নিয়মিত গ্রেপ্তারের খবরও আসছে। গত ২২ মাসে পুলিশ দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।
এসব অবৈধ ও বেআইনি অস্ত্র উদ্বেগজনক। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের এই অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। এমনিতেই নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান বেড়েছে বহুলাংশে। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে কেনা অস্ত্র রাজধানীতে দেদার বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা মেটাতে দেশের অন্তত ২৫টি সীমান্ত রুট দিয়ে ঢুকছে বিপুলসংখ্যক অবৈধ অস্ত্রের চালান। ভয়ংকর একে সিরিজের অস্ত্র আসছে সমুদ্রপথে।
ভারত, মিয়ানমার হয়ে দেশে আসা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ কারণে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে গুলির ঘটনা। এসব অস্ত্র কারা আনছে; কীভাবে এবং কোথা থেকে আনা হচ্ছে, আর কারা এর ক্রেতা- এসব বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্রের চালানই বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। কেননা নির্বাচন এলে পেশিশক্তি ও প্রভাবশালীদের দাপট বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা, প্রচার-প্রচারণা নির্বিঘ্ন করতে এবং নির্বাচনের অনুক‚ল পরিবেশ তৈরির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করতে এবং নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূলে রাখতে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাস্তানদের তালিকা করে গ্রেপ্তারসহ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। নানা অপরাধ কর্মকান্ডে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়।
তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটের মাঠের নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা ধরে রাখতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। আসন্ন নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার এবং বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। কারা অবৈধ অস্ত্রের ক্রেতা, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। বৈধ অস্ত্র যাতে কোনো অবৈধ কর্মকান্ডে ব্যবহার করা না হয়, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। কাদের নির্দেশনায় সীমান্ত পার হয়ে অস্ত্রগুলো দেশে ঢুকছে- এ বিষয়ে বাড়তি নজরদারি দরকার।
নির্বাচনের সময় অস্ত্রধারীদের ‘কদর’ বাড়ে। অস্ত্রধারীদের বিচরণে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে ব্যাহত করে। সে জন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি, বৈধ-অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচনের সময় যেন কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটাতে না পারে, সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য