-->
শিরোনাম

১৫ আগস্ট কী হবে?

শিপংকর শীল
১৫ আগস্ট কী হবে?
  • সরকারি ছুটি বাতিল
  • বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে অনুমতি চায় আ.লীগ
  • বিভিন্ন দলের অনুমতি না দেওয়ার পরামর্শ

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করেছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউসূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দিবসটি পালন করার জন্য দেশবাসীর প্রতি ইতিমধ্যে আহ্বান জানিয়েছেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। এদিকে দিবসটি পালন করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অনুমতি চেয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অনুমতি না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহামম্মদ ইউনূসকে। তাদের দাবি- দিবসটি পালনের অনুমতি দিলে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়ো হবে। গণঅভুত্থানকারীদের সঙ্গে তাদের সংঘাত হতে পারে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস (১৫ আগস্ট) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট তা বাতিল করে। ২০০৮ সালে হাইকোর্টের এক রায়ে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পুর্নবহাল করা হয়। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাজধানীসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন। বাদ যায়নি ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনও; সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছিল।

জানা গেছে, দলের সিনিয়র কিছু নেতা পরিস্থিতি বুঝে শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগে ও পরে দেশ ছেড়ে গেলেও বড় অংশই দেশের ভেতরে রয়ে গেছেন। শেখ হাসিনার হঠাৎ চলে যাওয়ার কারণে দেশ ছাড়তে না পেরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মী দেশেই গাঢাকা দিয়েছেন। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে রাজধানীর বাসা বা গ্রামের বাড়ি বাদ দিয়ে দূরবর্তী কোনও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ স্ত্রী-সন্তানকে কোনও আত্মীয়ের বাসায় রেখে নিজে যাযাবরের মতো বারবার স্থান পরিবর্তন করছেন। কেন্দ্রীয় থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের অধিকাংশ দলীয় নেতা নানাভাবে আক্রান্তের র্শিকার হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতেও জাতীয় শোক দিবস পালনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ১৫ আগস্ট উপলক্ষে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। গত ১১ আগস্ট রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও বার্তাটি দেন তিনি। ভিডিও বার্তায় সজীব ওয়াজেদ বলেন, আপনারা জানেন, বঙ্গবন্ধু দলীয় বিষয় না। বঙ্গবন্ধু হলেন জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু না হলে আজ আমরা বাংলাদেশ পেতাম না। আজকে পাকিস্তান হয়ে থাকতাম। সামনে ১৫ আগস্ট। সেই কালরাত, যে রাতে বঙ্গবন্ধু ও আমার পরিবারকে হত্যা করা হয়। আপনারা যদি স্বাধীনতার চেতনা বিশ্বাস করেন, আপনারা যদি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। এই যে বাংলাদেশে বাস করছেন এবং যদি মেনে নেন যে বঙ্গবন্ধু আপনাকে স্বাধীনতা দিয়েছে, আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছে। ১৫ আগস্ট আপনাদের প্রতি আহ্বান, শান্তিপূর্ণভাবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দিয়ে আসবেন। দোয়া করবেন, বঙ্গবন্ধুর জন্য, স্বাধীনতার চেতার জন্য, আমার পরিবারের জন্য।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ কর্মসূচির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ মাহফিল এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে কলাবাগান মাঠ হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত শোক র‌্যালি রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া আওয়ামী লীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়েছে। ১৫ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিগুলো হলো- ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।

সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ মাহফিল। সকাল ৯টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে কলাবাগান মাঠ হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত শোক র‌্যালি। এরপর সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। দুপুর ১২টায় টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

বাদ জোহর কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে (রাত ১২:০১ মিনিট) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩/৭-এ সেনপাড়া পর্বতা, মিরপুর-১০) মোমবাতি প্রজ্জ্বালন ও বিশেষ প্রার্থনা, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করবে।

জাতীয় শোকদিবস বাতিলের পরামর্শ রাজনৈতিক দলগুলোর : সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বিজেপি, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এনডিএম নেতারা। ওই বৈঠকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, ১৫ আগস্ট জমায়েত হলে শেখ হাসিনার দলকে প্রতিহত করবে অভ্যুত্থানকারীরা। আলাদা বৈঠক থেকে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিও উঠেছে।

আওয়ামী লীগ সেদিন জমায়েত হয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করবে বলে ধারণা থেকে অভ্যুত্থানে শরিক রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, ছাত্র-জনতার বিজয় নস্যাতের চক্রান্ত চলছে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল ড. ইউনূস ১৫ আগস্টের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চান। একমাত্র বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ১৫ আগস্ট পালনের পক্ষে মত দেন। তিনি বলেছেন, ১৫ আগস্ট সর্বজনীন। যতটুকু শ্রদ্ধা পাওয়া উচিত, ততটুকু শ্রদ্ধাই যেন পান বঙ্গবন্ধু। উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক বক্তব্য থেকে বিরত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানসহ নানা ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আলোচনা করেন বিএনপি নেতারা। সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল দাবি রাষ্ট্র সংস্কারকে প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিজস্ব এজেন্ডায় ১৫ আগস্টে জাতীয় শোক দিবস পালন এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ধঅন্তর্ববর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ থাকবে, বিজিবি র‌্যাব থাকবে। সেনাবাহিনীও থাকতে পারে।

নিরাপত্তা চায় আ.লীগ : ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, এই কর্মসূচিকে ঘিরে দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ওই এলাকার নিরাপত্তার জন্য দলের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করি সেই অনুমতি দেওয়া হবে।

এর আগে রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে দলীয় নেতাকর্মীদের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর অনুরোধ জানান।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version