-->

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া কি সম্ভব

ড. মো. আইনুল ইসলাম
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া কি সম্ভব

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও বর্তমান পরিস্থিতি গণমাধ্যমের বদৌলতে বিশ্বব্যাপী সমাজবিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা ও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারণ, ‘রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রশাসন, প্রতিরক্ষাসহ সমস্ত ক্ষেত্রে নাগরিকদের প্রতি পদে পদে বৈষম্য’কে কেন্দ্র করে অর্ধশত বছর আগে যে দেশটি স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ নাম নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল, সে-ই আবার ওই বৈষম্যকে কেন্দ্র করেই ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ প্রাপ্তির কথা বলছে।

সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার জেরে বৈষম্যজর্জর বিশ্ববাসী তাই নড়ে-চড়ে বসেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গুগল-ফেসবুক-ইউটিউব-ইনস্টাগ্রামের প্রজন্ম হিসেবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা জেনারেশন-জেড-এর ১০-২৪ বছর বয়সীদের ছোট্ট একটি অংশের শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের ফলে পরমাণু শক্তিধর দেশসহ অনেক দেশের প্রত্যক্ষ সহায়তা পেয়েও প্রবল ক্ষমতাধর একটি একনায়কতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা যেভাবে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে, তাতে পুঁজিবাদী ও একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় পরিচালিত অসংখ্য দেশের সতর্ক হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ, এসব দেশে বৈষম্য জনসাধারণের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে।

পাশ্চাত্যের সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ‘জেনারেশন-জেড বিপ্লব’ কিংবা ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ যা-ই বলা হোক না কেন, মানবসমাজের ইতিহাস সাক্ষী যে শাসকগোষ্ঠীর সংখ্যাস্বল্প মানুষজন দশকের পর দশক ধরে দোর্দ প্রতাপে কোটি কোটি মানুষকে গরু-ছাগল-ভেড়ার মতো পরিচালিত করেছে, ক্ষমতাকাঠামোর সুবিধা নিয়ে বিপুল অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতার পাহাড় গড়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করেছে; তারাই আবার একটা পর্যায়ে গিয়ে সবকিছু ছেঁড়েছুড়ে প্রাণের ভয়ে এদিক-সেদিক পালিয়ে বেড়িয়েছে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সবাইকে বিষয়টি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশের এই প্রবণতা দেখাচ্ছে, একনায়কতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার স্থায়িত্বকাল অতীতের মতো দীর্ঘ না হয়ে বরং সংকুচিত হচ্ছে। এ সত্ত্বেও পৃথিবীতে মানুষের মানুষ শোষণের লোভ ও আনন্দ উপভোগের চেষ্টা কখনো থেমে থাকেনি, হয়ত ভবিষ্যতেও থাকবে না। তাই সমাজ-অর্থনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় শোষক ও শোষিতের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ একটা অবস্থান তৈরি করার বিষয়ে সবাইকে মনোযোগী হতে হবে, যাতে করে বৈষম্য থাকলেও তা যেন সবার জন্য সহনীয় হয়। কারণ, বিশ্বপ্রকৃতির ছোট্ট একটি অংশ মানবসমাজের লোভ-লালসানির্ভর জীবনব্যবস্থা প্রকৃতির জন্যও এখন চরম হুমকির কারণ হয়ে উঠেছে।

পাশ্চাত্য বিশ্লেষকদের বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে এমনতর আগ্রহ ও মতামতকে একপাশে সরিয়ে রেখে বাংলাদেশের সমাজ বিজ্ঞানীদের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, তারা বলছেন, বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে বৈষম্যহীন এক বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ৫৩ বছরেও তা বাস্তব রূপ পায়নি। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে (আজকের বাংলাদেশ) মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ লোক বাস করত, তথাপি মোট উন্নয়ন বাজেটের মাত্র ২০ থেকে ৩৬ শতাংশ এখানে ব্যয়িত হতো।

রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রশাসন, প্রতিরক্ষাসহ সব খাতেই পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য করা হতো। ১৯৫০ থেকে ১৯৭৩ এই দুই দশকে যেখানে বিশাল ভারতের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছিল ২২ শতাংশ, সেখানে ওই একই সময়ে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা ছিল ২৫ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বা পূর্ব পাকিস্তানে ওই একই সময়কালে ৮ শতাংশ মাথাপিছু আয় হ্রাস পেয়েছিল। এমনই ছিল বৈষম্যের রূপ! এসব বঞ্চনা ঝেড়ে ফেলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হলো।

এরপর থেকে সরকারি পরিসংখ্যানে নিয়মিতই বলা হয়েছে, মানুষের আয় বেড়েছে ও দারিদ্র্য কমেছে। কিন্তু এসব পরিসখ্যানে সর্বব্যাপ্ত বৈষম্যের কী রূপ বৃদ্ধি ও ব্যাপ্তি ঘটেছে, তা খুব সাবধানে আড়াল করা হয়েছে। ১৯৭৩ সালে সর্বনিম্ন আয়কারী ৪০ শতাংশ খানার আয় দেশের মোট খানার আয়ের ১৮.৩ শতাংশ ছিল, যা ২০২০ সালে নেমে হয়েছে মাত্র ৬.১২ শতাংশ। অর্থাৎ এই সময়ে মানুষের বড় একটি অংশের অবস্থা ক্রমশই খারাপতর হয়েছে, আর ক্ষমতাকাঠামোর কাছাকাছি থাকা কিছু মানুষের ভালো অবস্থার চরমতম উন্নতি ঘটেছে।

যার প্রমাণ পাওয়া যায়, বাংলাদেশে একনায়কতান্ত্রিক সরকার পতনের পর রাজধানী ঢাকায় সরকারের ঘনিষ্ঠতম এক ব্যক্তির বাসা থেকে অবৈধভাবে সঞ্চিত নগদ ৭৭ মিলিয়ন ডলার, পাউন্ড, ইউরো ও দুবাই দিরহাম (বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা) উদ্ধার করা থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকটে ভুগছে, তখন সরকারের প্রথম শ্রেণির মাত্র একজন কর্মকর্তার বাসা থেকেই এত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার, নিশ্চিতভাবেই বৈষম্যের ব্যাপকতা প্রমাণ করেছে।

অতীতের অভিজ্ঞতায় এবং বিদ্যমান বাস্তবতায় বাংলাদেশে এখন অনেকের মনে প্রশ্ন উঠছে, শাসকগোষ্ঠীর লোভ-লালসানির্ভর ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে নির্ভয়ে অসংখ্য শিশু-কিশোর-তরুণের আত্মাহুতির বিনিময়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ অর্জন আদৌ কি সম্ভব হবে? চারপাশের মানুষের কর্থাবার্তায় কান পাতলে শোনা যায়Ñ আশাবাদী মানুষেরা মনে করছেন, মানুষের জন্য অসাধ্য বলতে কিছুই নেই, শুধু প্রয়োজন লক্ষ্য অর্জনের সদিচ্ছা। নৈরাশ্যবাদীদের মতে, ‘হাতি-ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল’ কিংবা ‘পুরান পাগল ভাত পায় না, নতুন পাগলের আমদানি’; অর্থাৎ শিশু-কিশোর-তরুণের আত্মাহুতির কোনো মূল্য নেই।

আরেকটি পক্ষ দেখা যায়, যাদের মধ্যপন্থি বলা যায়। এরা মনে করেন, বিদ্যমান সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতির বিশ্বকাঠামোয় শতভাগ বৈষম্যহীন সমাজ বাংলাদেশে গঠন অসম্ভব ব্যাপার; কিন্তু সর্বব্যাপ্ত বৈষম্যকে একটি শোভন পর্যায়ে নিয়ে আসা খুবই সম্ভব। কারণ, তরুণ জনগোষ্ঠীনির্ভর বর্তমান বাংলাদেশ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি লক্ষ্য পূরণের ইচ্ছা, সাহস ও ত্যাগের মানসিকতার প্রমাণ দিয়েছে।

সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতিশাস্ত্রঘনিষ্ঠ মানুষেরা মনে করেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের মনে স্বাধীনতা-উত্তর দেখা দেওয়া বর্তমানের সাধারণতম প্রশ্নের উত্তর, অর্থাৎ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব কি না, তা জানতে হলে ইতিহাসের দ্বারস্থ হতে হবে।

জানতে হবে, বৈষম্য আসলে কী, কখন সৃষ্টি হয়, তার রূপ ও ধরনই বা কত প্রকারের। কারণ, যখন আমরা বৈষম্যের কথা বলি, তখন আমরা আমাদের বিদ্যমান সমাজের মৌলিক কাঠামো এবং ইতিহাসের চেয়ে কম কিছুর কথা বলি না। এখানে সমাজব্যবস্থার সংস্থানসমূহের বণ্টন থেকে শুরু করে সম্পদ, বাজার ও বিভিন্ন উপায় বা ব্যবস্থার নীতির ব্যর্থতা, সংশোধন ও ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গও এসে যায়, যা নির্ধারণ করে দেয় সম্পদ, বাজার ও সমাজ-রাজনীতিতে ব্যক্তি এবং পরিবারের অভিজ্ঞতা ও সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া আদৌ সম্ভব কি না।

এক্ষেত্রে বৈষম্যের বিভিন্ন ক্ষেত্র ও মাত্রা উপলব্ধি জরুরি। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গতিপথ ও নীতির পশ্চাৎপসরণই আসলে জেনারেশন-জেড এখন বিপ্লবের এক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে, যা সফল হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন নিশ্চিতভাবেই শোভন ও সুন্দর হবে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, শাসন-শোষণের আনন্দের স্বাদ পাওয়া সংখ্যাস্বল্প মানুষের গোষ্ঠীটি কিন্তু বিশ্বব্যাপী প্রবল ক্ষমতাধর, যারা হাজার হাজার বছর ধরেই ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও পরিচয়ে মানবসমাজের মৌলিক অধিকার ও চাহিদার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

আর এর মাধ্যমেই বিশ্বের অন্যতম ধনী ও পরাক্রমশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ১৯১৫ সাল থেকে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি হার একই জায়গায় স্থির থাকছে। ঐতিহাসিক জাতিগত বিভাজন, সরকারি নীতি, ধনীদের আপসহীন অবস্থান, বিশ্বায়ন, প্রযুক্তির পরিবর্তন আর শ্রমিক শ্রেণির ক্ষয়প্রাপ্ত শক্তি দেশটির এই অবস্থার কারণ।

এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, যুগ যুগ ধরেই মনোবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদরা বৈষম্যহীন সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের জন্য কাজ করে আসছেন, নানা মত ও পথের অনুসন্ধান করছেন। এই যেমন মনোবিজ্ঞানে উদ্দীপকের মধ্যে পার্থক্য উপলব্ধি করা ও প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতাকে বৈষম্য-অসাদৃশ্য উল্লেখ করে মানবমনে বৈষম্যের সৃষ্টি, কার্যকারণ ও সমাধানের কথা বলা হচ্ছে।

আবার সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ঐতিহাসিকদের মতো বিশ্লেষণ করে বলছেন, মানুষকে বৈষম্যের শিকারে পরিণত করার জন্য একজন ব্যক্তির সরাসরি ক্ষতির প্রয়োজন নেই, তাকে শুধু ব্যক্তিটির ইচ্ছা পূরণে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করার উপায়টুকু জানতে হবে। আর এই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উপায়টুকু জানাকে কেন্দ্র করেই পৃথিবীর ইতিহাসে খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩০ সময়কালে মিসরে প্রথম আন্দোলন-বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল, যার নাম ছিল ‘সেথ বিপ্লব’। শুনতে অবাক লাগলেও এই বিপ্লবের মূল উপজীব্য ছিল ‘দেবতার মালিকানা’কে কেন্দ্র করে।

নীল নদ অববাহিকার জমির উর্বরতা শক্তি, মরুভূমি, ঝড়, বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা ও প্রাচীন মিসরীয় ধর্মে বিদেশিদের দেবতার উপস্থিতিকে অনুষঙ্গ করে সংঘটিত ওই বিপ্লবের ফলে তৎকালীন মিসর দুটি অংশে ভাগ হয়ে গিয়েছিল এবং সৃষ্টি হয়েছিল শাসক ও শোষিতের অপ্রতিরোধ্য এক ইতিহাস। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শাসক ও শোষিতকে উপজীব্য করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিপ্লব হয়েছে, যার কিছু কিছু শতভাগ সফলও হয়েছে। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে সেখানে আবারও শাসক ও শোষিতের দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

অর্থাৎ বৈষম্য অপ্রতিরোধ্য গতিতেই চলছে এবং তার গতি ও রূপের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, বৈষম্যের এই ছুটে চলার কারণ হচ্ছে মানুষের প্রকৃতিকে বশ করে শাসন করার বাসনা। যেখানে মানুষ নিজেই প্রকৃতির ক্ষুদ্র একটি অংশ, সেখানে খোদ প্রকৃতিকে শাসন করার চেষ্টা আর যা-ই দিক না কেন, মানবসমাজের শতভাগ সুখ-সমৃদ্ধি ও বৈষম্যহীনতার নিশ্চয়তা দেয় না।

এ রকম এক প্রেক্ষাপটে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ আদৌ সম্ভব কি না? এর উত্তর হচ্ছে, প্রথাগত ও বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশে বৈষম্যের উচ্ছেদ আসলে সম্ভব না। শুনতে কষ্ট হলেও, এটাই সত্যি। কারণ, এখানে ভূষণ-ব্যসনে, চেয়ার-টেবিলে, এমনকি কন্যা ও পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিতে রূপ নিয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশের মানুষের ক্ষেত্রে না, বৈষম্যের উচ্ছেদকামী বিশ্বের সব মানুষের জন্যই প্রযোজ্য।

এর কারণ, মানুষের মনোজগতে যখনই সম্পদের ওপর মালিকানা ও অধিকারবোধের জন্ম হয়েছে, তখনই বৈষম্যের উদ্ভব ঘটেছে। তবে একদম নিরাশ হওয়ার কিছু নেই; বৈষম্য লক্ষণীয়ভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য সর্বাগ্রে সম্পদের মালিকানা প্রশ্নটির সুষ্ঠু সুরাহা হতে হবে, সম্পদের বণ্টন একটি সুষম ও শোভন মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক আন্দোলন-বিপ্লবে বৈষম্যনির্ভর এক শাসনব্যবস্থার অবসান হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ছাত্র-জনতার মনের আশা সফল না ব্যর্থ হবে, তা জানতে আরও অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে। কারণ, প্রতিটি আন্দোলন-বিপ্লবেরই বেশ কয়েকটি ধাপ ও উত্তরণ পর্যায় থাকে এবং এ সময় প্রতিবিপ্লবীরাও সচেষ্ট থাকে। ফলে ভালো বা মন্দ যা-ই হোক, নতুন ব্যবস্থা সৃষ্টির কারিগরদের সময় ও সুযোগ দিতে হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, যেকোনো ধ্বংসই কিছু না কিছু পরিবর্তন ডেকে আনে। এখানে ১৭৮৯-৯৯ সময়কালে সংঘটিত ফরাসী বিপ্লবের ২০০ বছর উদ্যাপনের প্রাক্কালে চীনের বিপ্লবী নেতা চৌ এন লাই-এর একটি মন্তব্য খুবই প্রণিধানযোগ্য। ১৯৭০ এর দশকে ঐতিহাসিক দিক থেকে ফরাসি বিপ্লবের মূল্যায়ন করতে বলা হলে, চৌ এন লাই বলেছিলেন, ‘এটি মূল্যায়নের জন্য ২০০ বছর খুবই কম সময়।’

লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version