-->
শিরোনাম

গুমের ঘটনার তদন্ত কমিশনের কাছে অনেক প্রত্যাশা

মোস্তাফিজ বুলবুল
গুমের ঘটনার তদন্ত কমিশনের কাছে অনেক প্রত্যাশা

বাংলাদেশে অপহরণ ও গুমের ঘটনা বিগত সরকারের আমলে অহরহ ঘটেছে। যার স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে গুম হওয়া ব্যাক্তিদের স্বজনদের কান্না ও আহাজারি এখনো না থামার মাধ্যমে। মায়ের ডাকের কান্নার আওয়াজ যেন দিনদিন বেড়েই চলেছে। সেই কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে বাতাস।

আমরা জানি , গুম হচ্ছে কোনো ব্যক্তিকে তুলে বা অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর খোঁজ না মেলা। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর কোনো ব্যক্তিকে যদি বিচার ব্যবস্থার কাছে সোপর্দ না করা হয় এবং তাকে আর খুঁজে পাওয়া না যায়, তবে সেটিকেই গুম হিসেবে ধরা হবে। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়া বলতে বোঝায় এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়ার পর সেই ব্যক্তিকে আটক করার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। ফলে এই পুরো প্রক্রিয়াটি অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর জোরপূর্বক গুমের শিকার হওয়া তিনজন বাংলাদেশি মুক্ত হন। গত ৬ আগস্ট প্রায় আট বছর পর গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্ত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। একই দিনে পাঁচ বছরের বেশি সময় পর গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্ত হন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা। হাসিনার শাসনামলের অবৈধ গোপন বন্দিশালা থেকে আট বছর পর মুক্তি পান আজমী ও আরমান এবং মাইকেল চাকমা পাঁচ বছর পর মুক্তি পান। তিনজনই বলেছেন যে তারা কবরের মতো অবস্থায় আটক ছিলেন, যেখানে সূর্যের আলো দূরের কথা, কোনো আলোই ছিল না এবং বেশির ভাগ সময় তাদের হাত বাঁধা ও চোখে পট্টি লাগানো থাকত। এই তিন বন্দির মুক্তির পর এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছে যে এত দিন ধরে মানবাধিকার সংগঠনগুলো যে অভিযোগ করে আসছিল, তা সত্যি। সংগঠনগুলোর অভিযোগ ছিল, সরকারবিরোধী ও সমালোচকদের দমন করার জন্য জোরপূর্বক গুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছিল হাসিনার সরকার। তাদের মুক্তির পরই গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের আন্দোলনের মুখে কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই কমিশনের কাছে অনেক প্রত্যাশা রয়েছে জনগণের। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তাদের তদন্ত রিপোর্ট যাতে সঠিক ও দ্রুত হয় সেই প্রত্যাশা আমাদের।

গুমের ঘটনা তদন্তে ও নিখোঁজ হওয়া ব্যাক্তিদের রহস্য উদ্ঘাটনে কমিশন ঘটন করা হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন গঠন করেছে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ওই কমিশন গঠন করে গত মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিশনকে তদন্ত করে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের হাতে জোর করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস এবং মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন। এতে হাসি ফুটেছে গুম হওয়া বা নিখোঁজ হওয়া মানুষের স্বজনদের মুখে। তারা আশায় বুক বাঁধছেন নিখোঁজ স্বজনদের ফিরে পাবে এবং এই গুমের ঘটনার শুষ্ঠু বিচারের আশায়। ফিরে আসবেন গুম হওয়া ব্যাক্তিরা । বর্তমান সরকারের এই মহতি উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এই কমিশনের মাধ্যমে গুমের ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনসহ দোষীদের বিচার কাজ দ্রুতসম্পন্ন ও সহজ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

বাংলাদেশে মানুষ গুমের ঘটনা নতুন কিছু বলে আমরা মনে করি না। যুগ যুগ ধরে চলে আসওে মানুষ গুম ও অপহরণের মতো ঘটনা। এই গুমের ঘটনায় কতশত মানুষ যে নিখোঁজ রয়েছে তার সঠিক হিসাব বা পরিসংখ্যান পাওয়া দুষ্কও বিষয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেওয়ার পর লাশ উদ্ধার বা নিখোঁজের ঘটনাগুলো আলোচনায় ছিল। এ সময় হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন, গোপন বন্দিশালায় দীর্ঘদিন আটকে রাখার ঘটনাগুলোও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। জোরপূর্বক গুমের ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য একটি জাতীয় কমিশন গঠন করার দাবিও এখন বাস্তবায়িত হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সাত শতাধিক বাংলাদেশি জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন।তাদের কয়েকজন ফিরেছেন, বাকিরা এখনো ফেরেননি। বাংলাদেশে বিগত আওযামী লীগ সরকারের আমলে ১৫ বছরে ৬১৪টি গুমের ঘটনা ঘটেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য মতে, গত ১৫ বছরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর ৬১৪ জন নিখোঁজ বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। জীবিত ও মৃত অবস্থায় ওই ব্যক্তিদের বেশির ভাগের খোঁজ মিললেও অন্তত ২০০ জন এখনো নিখোঁজ। আসকের ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, ৬১৪ জনকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭৮ জনের লাশ পাওয়া যায়। ৯৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়া ফিরে আসেন ৫৭ জন। অন্যদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়নি। ২০১৪ থেকে জুলাই ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৪৪ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৪০ জন ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে গ্রেপ্তার অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে ২০৩ জন এখনও গুম রয়েছেন। যারা দীর্ঘদিন গুম থাকার পর ফিরে আসেন, তারা গুমের ব্যাপারে মৌন অবলম্বন করেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে আলোচনার জন্ম দেয় এম ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনা। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর সঙ্গে নিখোঁজ হন তারই গাড়িচালক আনসার। ১০ বছরে তাদের হদিস মেলেনি। আর্থিকভাবে সচ্ছল ইলিয়াসের পরিবার সংকট কাটিয়ে উঠলেও পারেনি আনসারের স্বজনরা। ১১ বছরের স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে কোনোমতে সংসার চালান আনসারের স্ত্রী মুক্তা বেগম।

১৯৭৬-১৯৮৩ সালের মধ্যে আর্জেন্টিনায় হাজার হাজার নাগরিকের জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা তদন্তে যে কমিশন গঠন করেছিল, কমিশন সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম থেকে সবার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সনদ গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে গুমের হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারটি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আসে এবং কাউকে গুম করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃতি পায়। ২০১১ সাল থেকে ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। সনদ অনুযায়ী, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির কোনো প্রকার হদিস না পাওয়া গেলে এবং সরকার, প্রশাসন বা প্রভাবশালীরা হত্যা করে মৃতদেহ লুকিয়ে ফেললে সেটি গুম বলে বিবেচিত হবে।

আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গুম হওয়া মানুষগুলোর কি হয়েছিল, কাদের আদেশে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এ সব বের করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে।এই উদ্যেগকে সাধুবাদ জানাই আমরা। আশা করব, এই কমিশন যেন শুধু আমলা ও মানবাধিকারকর্মী নির্ভর না হয়ে যায়। এটি আমাদের দেশে গুমের ঘটনা বন্ধসহ বিগত সরকারের আমলে এই গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার কার্যসম্পন্ন করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারও গুমের ঘটনার তদন্তে গত ২৭ আগস্ট কমিশন গঠন করেছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের সদস্যদেও কথা শুনে পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশাবাদী। সংগঠনটি ১৮ আগস্ট বিভিন্ন সময় গুমের শিকার ১৫৮ ব্যক্তির একটি তালিকা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালকের কাছে দিয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ৭৬ জনের একটি তালিকা বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছিল। কাজেই মায়ের ডাকের সহযোগিতা নিয়ে কমিশন কাজ করবে সেই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। গুমের শিকার পরিবারগুলোর সংগঠন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ গুমের আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হচ্ছে। এখন আমরা বিচার পাওয়ার আশা রাখছি। সবগুলো গুমের ঘটনার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবে কমিশন সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।

গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও এই মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ন্যায়বিচার পাননি। সামগ্রিকভাবে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের লক্ষ্য হচ্ছে গুম বন্ধের পাশাপাশি এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তি বন্ধ করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৭৫টি দেশ এই সনদে যুক্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৩০ আগস্ট গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের আগেই এই সনদে যুক্ত হতে চায় বাংলাদেশ সরকার। গত সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ এবং ‘আয়নাঘরের’ মতো চরম ঘৃণ্য অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। এরই মধ্যে গত ২৭ আগস্ট গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করল। কমিশনের কার্যপরিধিতে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছেন, তা নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ ছাড়া গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়স্বজনকে জানানো এবং গুম হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তদন্ত করলে সেগুলোর তথ্যসংগ্রহ করবে এই কমিশন।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version