-->
শিরোনাম
বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

নতুন বাস্তবতা ও আগামীদিনের স্বপ্ন

মোস্তাফিজ বুলবুল
নতুন বাস্তবতা ও আগামীদিনের স্বপ্ন

গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রাণ প্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির আজ ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। দলের প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছর উদযাপনে পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।গত বুধবার বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-আজ ১ সেপ্টেম্বর সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতেহা পাঠ ও শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপির উদ্যোগে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।২ সেপ্টেম্বর মহানগর-জেলা-উপজেলায় শোভাযাত্রা, ৩ সেপ্টেম্বর মহানগর-জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নে মৎস্য অবমুক্তকরণ এবং ৪ সেপ্টেম্বর সারাদেশে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিবস উপলক্ষে দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন আলোচনা সভা করবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বাইরে সব জেলা ইউনিট ও অঙ্গসংগঠন কর্মসূচি পালন করবে নিজেদের মতো করে।প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো পোস্টার ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে চলছিল অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থানের পালা।সেই পটভূমিতে ৭ই নভেম্বর ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন জিয়াউর রহমান।প্রথমে তিনি ১৯ দফা অর্থনৈতিক কর্মসূচীর ভিত্তিতে জাগদল নামে রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করেন। সেই প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপির জন্ম হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন,ভিন্ন ভিন্ন মতের রাজনীতিককে জড়ো করে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ফলে দলটি প্রতিষ্ঠার পরেই এর আর্দেশের বিষয় এসেছে বলে তাঁর ধারণা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলছিলেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠার পরই মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক ইতিহাসকেই ভিন্নভাবে উপস্থাপনের কারণে বিভাজন সৃষ্টি হয়।

১৯৭৮ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উন্নয়ন ও সমন্বয়ের রাজনীতির মাইলফলক হিসেবে, স্বাধীনতা-পরবর্তী একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় । নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনা, দেশের রুগ্ন অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার, জাতি হিসেবে আমাদের আত্ম পরিচয়ের সঙ্কট মোচন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম গর্বিত জাতি এবং আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি রচনা ও দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।

রাজনৈতিক নেতাদের নেতৃত্বদানের অযোগ্যতায় ও নানা পট-পরিবর্তনে সিপাহী-জনতার একতায় সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের উপর দেশ শাসনের দায়িত্বভার অর্পিত হয়। ১৯৭৮ সালের জুনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন শহীদ জিয়াউর রহমান এবং আবারো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ফিরিয়ে দেন গনতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, জাতীয় ঐক্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জিয়াউর রহমানের অনুপ্রেরণায় গঠিত হয় জাতীয়তাবাদী গনতান্ত্রিক দল (জাগদল)। পরে আরো কয়েকটি দলের সম্বন্বয়ে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে বিভিন্ন দলের মোর্চা ও ফ্রন্ট এক করে একক রাজনৈতিক দল হিসেবে ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান গড়ে তোলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় প্রাচীন দলের পর বিএনপির মতো আরেকটি বড় দল রাজনীতিতে আসায় দেশে গণতান্ত্রিক ধারা বিকশিত হয়েছে। বিএনপি প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হতো। দেশ একদলীয় শাসন কিংবা স্বৈরাচারী শাসন থেকে বেরিয়ে আসতে পারত না।

১৯৭৯ ফেব্রুয়ারী সাধারন নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করে। সাধারন নির্বাচনের পর দেশ থেকে সামরিক আইন ও জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ১৯দফা কর্মসূচী ঘোষনা করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ডাক দেন। ১৯৮১ সালের ৩০মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সুবহা সাদিকের সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কুচক্রী সেনাসদস্য কতৃর্ক শহীদ হন।

এরপর বিএনপির জন্য পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বড় ধরণের সংকটে পড়ে দলটি। ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারী একজন সাধারন গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারী সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি শোসনহীন, দুর্নীতিমুক্ত, আত্ননির্ভশীল দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। বিগত কিছু কাল যাবৎ আমি বিএনপি কার্যক্রম গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। দলের ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হতে পারে, এমন মনে করে আমাকে দলের দায়িত্ব নেবার অনুরোধ করা হয়েছে। তাই দলের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপিতে যোগ দিয়েছি ও দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছি। দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং শহীদ জিয়ার গড়া দলে ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া আমার লক্ষ্য।১৯৮৩, ১লা এপ্রিল বিএনপির বর্ধিত সাধারন সভা থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান পদে আসীন করা হয়। ১৯৮৪ সালের আগস্ট মাসে বেগম খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন এবং বিএনপিতে নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়। নেতা-কর্মীরা নতুন আশার আলোয় আবারো রাজপথে নেমে আসে। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নানাবিধ হুমকি আসতে থাকে, চক্রান্ত চলতে থাকে তাকে ব্যর্থ করে দেবার। কিন্ত অকুতোভয়, সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও গনতন্ত্রের পথে পথ চলতে আপোসহীন ভূমিকা নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।বিএনপি ১৯৮৬ সালের সাধারন নির্বাচন বয়কট করে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগেরও বয়কট করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ এ প্রহসণের নির্বাচনে অংশ নেয় ও জাতীয় বেঈমান খেতাব প্রাপ্ত হয়।

১৯৯০ স্বৈরাচারের পতন আন্দোলনে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে একলা পথ চলেন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময়ে আন্দোলন করে অসহনীয় জুলুম নির্যাতন সহ্য করেন এবং ‘গণআন্দোলন’ সংগঠিত করেন। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ডাকে দেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসে। ফলে এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। বেগম খালেদা জিয়ার গনআন্দোলন সফল হয়। ফিরে আসে গনতন্ত্র। বেগম জিয়ার আপোসহীন নেতৃত্বের কারণে দেশবাসীর মাঝে ব্যাপক তার জনপ্রিয়তা তৈরী হয় এবং ‘দেশনেত্রী’ অ্যাখ্যায়িত হন। ১৯৯১ সাধারন নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে একক ভাবে সরকার গঠন করে ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্ত তৎকালিন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে একদিনও শান্তিতে থাকতে দেবে না বলে সংসদে সরকারকে হুশিয়ারী দিয়ে সরকারের মেয়াদের ৫ বছরে শতাধিক হরতাল ও অসহযোগের মাধ্যমে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী সংবিধান রক্ষার নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচন হয়। সংবিধানে সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযুক্ত করতে এবং সাধারন নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতেই ১৯৯৬ সালের নির্বাচন করা হয়। এ নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ছিল শুধু সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্ববধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারন নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ পায়। বিরোধী দল হয়েও সরকারকে সর্বাত্নক সহযোগিতা করে বিএনপি মানুষের কাছে আবারো নতুন পথের সন্ধান দেয়। ২০০১ সালের ১লা অক্টোবর নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি ৩য় বারের মতো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে নির্বাচিত হয় এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ৩য় বারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

২০০৬ সালে বিএনপি সরকার ২৮ অক্টোবর মেয়াদ শেষে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার সন্ত্রাসের নৈরাজ্য ও মানুষ হত্যায় সামরিক বাহিনী সমর্থিত মঈন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকার ১লা নভেম্বর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল এই অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এজন্য তারা দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। আটক করে তার দুই ছেলেকে। গ্রেফতার থেকে বাদ যায়নি দলের সিনিয়র নেতারাও। তারা বিএনপিকে দুইভাগে বিভক্ত করে সংস্কার ইস্যুকে কেন্দ্র করে। দল প্রায় দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবারও দলকে সুসংগঠিত করে তোলেন বেগম খালেদা জিয়া। দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে ও গনতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুদৃঢ় নেতৃত্ব ও জাতীয়তাবাদী শক্তির কাছে নতজানু হয়ে তারা পরিশেষে সাধারন নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।

২০০৯ সালের ২৯ডিসেম্বর সাধারন নির্বাচনে ক্ষমতায় বসে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। বিএনপি বিরোধী দলের আসনে বসে। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিরোধ, নিরাপত্তাসহ প্রায় ১৩টি জনদাবি আদায়, জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি ও সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির প্রতিবাদ, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন নীতি, হত্যা, সন্ত্রাস, গুম, মামলা, হামলার প্রতিবাদে এবং সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংসদ থেকে রাজপথে নেমে দীর্ঘ ১৭ বছর লড়াই করেছে বিএনপি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়মীলীগ সরকারের পতন হয়েছে।নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আজকে যারা ব্যাপক ঐক্যবদ্ধ গণতন্ত্রের বিজয়কে খণ্ডিত করার চেষ্টা করছেন নানাভাবে বিভাজনের চেষ্টা করছেন তাদেরকে বলে রাখি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষকের দল। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারের দল বীরত্বর সাহসের প্রতীকের দল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বেগম খালেদা জিয়া দেশনায়ক তারেক রহমানের দল। এই দল প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিজয়ের নেতৃত্বদানকারী দল।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা-শ্রমিকের আত্মদানে আমরা এই বিজয় অর্জন করেছি। আমাদের কোনোভাবেই তাদের অবদানকে খাটো করা যাবে না। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গণতন্ত্রের স্বপক্ষে আরও অনেকেই লড়াই করেছেন কিন্তু আমি বলবো যে বিএনপি ২০০৯ সাল থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ আন্দোলন করে গেছে। আজকে সবার আন্দোলনের অবদানে এই অন্তর্র্বতী সরকার। যারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যতটুকু সংস্কার করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে রাজনীতির যে ধারা সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটাই তো মূল লক্ষ্য এর জন্যই তো লড়াই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে। আজকে ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এজন্য আমি ছাত্র-জনতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এখন আমাদের সামনে কিন্তু বড় সংগ্রাম বড় লড়াই। সেই লড়াইটা এই বিপ্লবের বিজয়কে সুসংহত করা। এই বিজয়কে যদি আমরা সুসংহত করতে না পারি আবার কিন্তু নব্য ফ্যাসিবাদ এসে হাজির হবে, এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে কেউ যদি সন্ত্রাস করতে চায়, কেউ যদি চাঁদাবাজী বা অন্য কিছু করে, ক্ষতি করতে চায়, সেটা আমাদেরকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে রুখে দিতে হবে, প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, সর্বক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা যারা ভণ্ডুল করবে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে এবং ভণ্ডুলকারীদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সহ্য করব না। বিএনপি সমস্ত অন্যায়কে প্রতিহত করবে, সন্ত্রাসকে তারা প্রতিহত করবে এজন্য সমস্ত দল ও অঙ্গসংগঠন এক সাথে কাজ করবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি গত ১৭ বছর ধরে শত জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করে যেভাবে জনগণের আস্থা ধরে রেখেছে, তার ধারবাহিকতা রাখতে হবে। তবে আগামী নির্বাচন হবে একটি কঠিন পরীক্ষার নির্বাচন। নির্বাচনের ফলাফলের জন্য বিএনপি জনসমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এমন কোনো কাজ করা যাবে না যা জনগণের আস্থা নষ্ট করে। জনসম্পৃক্ত থেকে জনগণের আস্থা অর্জন ও সেটা অক্ষুণ্ণ রাখতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে হবে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version