-->
শিরোনাম

বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আদর্শের বিকাশ এবং এর প্রভাব

রাশেদুল হক রঞ্জন
বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আদর্শের বিকাশ এবং এর প্রভাব

বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আদর্শের বিকাশ এবং এর প্রভাব : একটি উদার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পথে অগ্রযাত্রা, এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে সকল প্রতিবন্ধকতাসমূহ অতিক্রম করা প্রয়োজনীয়-

অবতারণা: বাংলাদেশ, সাংস্কৃতিকভাবে ঐতিহ্য-সমৃদ্ধ এবং ঐতিহাসিকভাবে জটিল রাজনৈতিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আসা একটি দেশ। যা এখন একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের সন্ধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রয়েছে। গত তিন দশকে কিছু অগ্রগতি হলেও, দেশটি এখনও একটি উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, এবং ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে। একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এখন অতীব জরুরি যা জনগণের মতামত, স্বাধীনতা, এবং প্রযুক্তিগত অংশগ্রহণকে প্রাধান্য দেয়Ñ যেখানে সরকার সত্যিকার অর্থেই জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং পরিচালিত হয়। এই প্রবন্ধটি সেই বাধাগুলো পর্যালোচনা করে এবং সেগুলো অতিক্রম করার জন্য শিক্ষা, বিভিন্ন মিডিয়া বা প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা, জনগণের সাক্ষরতাহার বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, এবং প্রযুক্তির মতো কার্যকর কৌশলগুলোর প্রস্তাবনা করে, যা প্রকৃতরূপে একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েমের পথ দেখায়, যেখানে জনগণের ইচ্ছা ও স্বাধীনতার প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে।

সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য এবং এর বিকাশ: বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর প্রাথমিক বছরগুলো সমাজতান্ত্রিক আদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ ছিল, যা ১৯৭২ সালের সংবিধান এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিফলিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর সামরিক শাসন এবং বাজারমুখী পুঁজিবাদ দেশটিকে সমাজতান্ত্রিক মূলনীতিগুলো থেকে ধীরে ধীরে বিচ্যুত করে। ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে নিওলিবারেল নীতির প্রবর্তন দেশের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বাজারভিত্তিক পুঁজিবাদে পরিবর্তিত করেছিল।

এই পরিবর্তনগুলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিলেও, সামাজিক বৈষম্য এতে বৃদ্ধি পেয়েছিল, ধনী এবং গরিবের মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি পেয়েছিল। সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য- যদিও দুর্বল হয়েছিল, তা এখনও জনসমাজকে কল্যাণমুলক করার আলোচনাকে প্রভাবিত করে এবং তা বিকাশের বিকল্প পদ্ধতির জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে।

প্রতিবন্ধকতাসমূহ

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং স্বৈরাচারী প্রবণতা: বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে যা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র ক্ষমতার লড়াই, স্বৈরাচারী প্রবণতা, জাতীয় কল্যাণের চেয়ে ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে দুর্বল ও বিরোধী কণ্ঠস্বরকে প্রান্তিকীকরণ করে আসছে, যা গণতন্ত্রের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার: মিথ্যাচার এবং অপপ্রচার গণতান্ত্রিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। রাজনৈতিক দলগুলো এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলো তাদের এজেন্ডা পূরণের জন্য তথ্যের অপব্যবহার করে, মিথ্যাচারিতা করে, এবং যার ফলশ্রুতিতে জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিভক্তি। এই তথ্যের অপব্যবহার নেতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষমতা সীমিত করে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে। সোশ্যাল মিডিয়া এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়, যার মাধ্যমে ভুল বিবরণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রকৃত জনমত গঠনের ওপর প্রভাব ফেলে। মিথ্যাচার কেবল জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করে না, বরং বিভাজনকে উসকে দেয়, যা সমাজকে অস্থিতিশীল করে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলস্বরূপ, একটি বিভক্ত সমাজ তৈরি হয় যেখানে তথ্য উৎসগুলোর প্রতি মানুষ তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, যা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়গুলোকে সঙ্গতিপূর্ণ করা কঠিন করে তোলে।

শিক্ষাগত বৈষম্য এবং অশিক্ষা: শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার সত্ত্বেও, অশিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা, যা নাগরিকদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিষয়গুলোতে অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং সঠিক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমালোচনা করার ক্ষমতা সীমিত করে। মুখস্থবিদ্যা-নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা প্রকৃত সৃজনশীলতা, সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে যা অপপ্রচারমূলক মিথ্যাচারকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা এবং জাতির গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে, একটি সজাগ এবং সক্রিয় নাগরিক সমাজ গড়ে তোলার প্রয়াসকে কঠিন করে তোলে।

অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বৈষম্য: ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধানের ফলে দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের বঞ্চনা ও প্রান্তিকীকরণ ঘটে যা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার মতো সম্পদের বিষয়গুলিতে অসম অংশগ্রহণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করে, যা সামাজিক বন্ধনকে দুর্বল করে, ক্ষোভের জন্ম দেয়, যা একটি ঐক্যবদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলা কঠিন করে তোলে।

দুর্নীতি এবং জবাবদিহির অভাব: দুর্নীতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গভীরভাবে প্রোথিত, যা প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তোলে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত কার্যক্রম প্রয়োজনীয় সেবাগুলো থেকে সম্পদ সরিয়ে নেয় এবং আইনের শাসনকে দুর্বল করে। দুর্নীতির ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের বিশ্বাস হ্রাস পায়, এবং গণতন্ত্র ও সুশাসনকে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার মতো সংস্কার বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে। দুর্নীতির ব্যাপক প্রকৃতি কেবলমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতাকে ক্ষুণ্ন করে না বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সম্ভাবনাকেও বাধাগ্রস্ত করে।

ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বিভাজন: বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, যা সম্ভাব্যভাবে একটি শক্তির উৎস, প্রায়শই ধর্মীয় বিভাজন, বৈষম্য এবং সহিংসতাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা জাতীয়তাবাদের ছদ্মবেশে ফ্যাসিবাদ ও অত্যাচারের উত্থানে অবদান রাখে। এই বিভাজন একটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই বিভাজনগুলোর ব্যবহার সামাজিক বিভাজনকে চিরস্থায়ী করে এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করে।

প্রতিবন্ধকতাসমূহ অতিক্রম করার উপায়

বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের ভূমিকা: সমাজতান্ত্রকি গণতন্ত্র এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য এমন একটি কাঠামো প্রদান করে যা সামাজিক মালিকানা, জনকল্যাণ, এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের ওপর জোর দেয়। সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যা সমাজতন্ত্রের উপাদানগুলোকে গণতান্ত্রিক শাসনের সঙ্গে একত্রিত করে। এটি একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যেখানে উৎপাদন, বিতরণ এবং বিনিময়ের উপায়গুলো সমগ্র সম্প্রদায় (প্রায়শই রাষ্ট্রের মাধ্যমে) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, একই সঙ্গে নিশ্চিত করে যে রাজনৈতিক ক্ষমতা জনগণের দ্বারা গণতান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করা হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, একটি সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক মডেল যা সামাজিক কল্যাণ, প্রধান শিল্পগুলোর জনস্বত্ব, এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে দেশটির জরুরি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সহায়ক। উদাহরণস্বরূপ, গুণগত স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, দুর্বলদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, শ্রমিকদের অধিকার ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা।

গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও শাসন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং স্বৈরাচারী প্রবণতাগুলো মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণ এবং আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। জনগণের ইচ্ছার প্রকৃত প্রতিফলন ঘটায় এমন অবাধ এবং স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যাপক নির্বাচন সংস্কার প্রয়োজন। স্থানীয় সরকারগুলোতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ এবং সরকারি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, সকলের জন্য ন্যায্য এবং একটি সমতল মঞ্চ তৈরি করা অপরিহার্য।

বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং গণমাধ্যম জ্ঞানের প্রচার: মিথ্যাচার, বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের বিস্তার রোধ করার জন্য জনগণকে গণমাধ্যম জ্ঞানসম্পন্ন করা অপরিহার্য। নাগরিকদের ভুয়া খবর চিহ্নিত করার ও তথ্য উৎসগুলো সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়ন করার এবং এর অপব্যবহার প্রতিরোধ করার জন্য প্রকৃত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান, সচেতনতাবোধ তৈরি, তথ্যের বিশ্লেষণ ও গণমাধ্যম জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা প্রয়োজন। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের এবং প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় রাখা এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্যের উপলব্ধতা নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীন গণমাধ্যম এবং অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা সমর্থন করাও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এবং সুশীল সমাজকে মিথ্যাচারের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।

শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার: নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য এবং সুনাগরিক হওয়ার শিক্ষার ওপর জোর দিতে শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার এনে সমালোচনামূলক চিন্তা এবং সৃজনশীল দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, গুণগত শিক্ষা পৌঁছানোর সুযোগ বাড়ানো, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা অবকাঠামোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা উচিত। দেশের সামগ্রিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করার জন্য শিক্ষা অবকাঠামোতে উপযুক্ত বিনিয়োগ করে ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি আরও তথ্যসমৃদ্ধ এবং সক্রিয় নাগরিকগোষ্ঠী তৈরি করতে পারে যা জাতির অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক বিকাশে অবদান রাখতে সক্ষম।

অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সামাজিকবৈষম্য হ্রাস করা: অর্থনৈতিকবৈষম্য দূর করতে সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং প্রগতিশীল করনীতি বাস্তবায়ন, নতুন নতুন চাকরি সৃষ্টি এবং দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সকল নাগরিকের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সামাজিক সেবাসমূহ নিশ্চিত করা, বৈষম্য হ্রাস এবং সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। এতে দেশের সকল জনগণ বিশেষ করে প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোও সমানভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ পেতে পারে এবং বাংলাদেশ একটি আরও ঐক্যবদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে পারে।

দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থা জোরদার করা: দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রশাসনিক সংস্কার এবং প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। দুর্নীতির জন্য কঠোর শাস্তি, স্বচ্ছতা বৃদ্ধির উদ্যোগ এবং প্রশাসনে সততার সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার। নাগরিক তদারকি কমিটি এবং তথ্য উন্মুক্তকরণ উদ্যোগের মতো প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে প্রসাশনিক কার্যক্রমে জনসাধারণের অংশগ্রহণ, কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা এবং সরকারি সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরবে এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ঐক্য প্রচার: ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিভাজন কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সামাজিক বন্ধনকে উৎসাহিত করতে হবে। সকল নাগরিক, তাদের ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পটভূমি নির্বিশেষে যেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী আইন এবং নীতির বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। আন্তঃসম্প্রদায় সংলাপ, শান্তি শিক্ষার কর্মসূচি এবং একে অপরের প্রতি সহনশীলতার সংস্কৃতি তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি বৈচিত্র্যময় কিন্তু ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারে। রাজনৈতিক উদ্দেশে ধর্ম বা সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেয় এমন বক্তব্য সমালোচনামূলকভাবে যাচাই করা, পরিহার করা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের মধ্যে সেতুবন্ধন করে, বাংলাদেশ একটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার: ডিজিটাল যুগে, প্রযুক্তি গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। সরকারকে এমন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করা উচিত যা নাগরিকদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে, মতামত প্রদান করতে, এবং নেতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। অনলাইন ভোটিং সিস্টেম, ডিজিটাল টাউন হল, এবং নীতিগত বিষয়ে পাবলিক পরামর্শের প্ল্যাটফর্মগুলো ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ যা একটি আরও সংযুক্ত এবং সক্রিয় নাগরিক সমাজ তৈরি করতে পারে। প্রশাসনে এ ধরনের ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকদের এবং তাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে যা নিশ্চিত করবে একটি সামগ্রিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।

পরিশেষে: বাংলাদেশের জন্য এই ধরনের একটি উদার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রাটি জটিল কিন্তু একটি অপরিহার্য লক্ষ্য। জনগণের প্রকৃত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায় এমন একটি শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক সংস্কার, গণমাধ্যম জ্ঞানের প্রচার, শিক্ষা সংস্কার, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস, দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রচারের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এই বাধাগুলো সমাধান করার মাধ্যমে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আদর্শ সমৃদ্ধ একটি ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে, একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তার নাগরিকদের ক্ষমতায়িত করতে পারে। প্রযুক্তি, শিক্ষা, এবং সকল সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের মতো প্রক্রিয়াসমূহের বাস্তবায়ন, এবং সরকারি সেবা ও সম্পদগুলোর সদ্ব্যবহার করে, বাংলাদেশ এমন একটি জাতি হিসাবে পরিণত হতে পারে যা শুধুমাত্র তার নাগরিকদের আকাক্সক্ষাকেই প্রতিফলিত করবে না, বরং বৈশ্বিক ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি মানদণ্ড হিসাবে দাঁড়িয়ে থাকবে।

লেকক: সাব-এডিটর, ভোরের আকাশPhone: +88-01918180309 (WhatsApp) Email: [email protected]: https://www.linkedin.com/in/rashedul-haque-ronjon

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version