-->
শিরোনাম

জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখতে হবে

বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের সঙ্গীত হচ্ছে জাতীয় সংগীত। এটা শুধু বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা আমরা মনে করি না। বিশে^ অনেক দেশের মানুষ আমাদের এই জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে আনন্দ পায়। এই সঙ্গীত যেন সবার প্রাণ ছুঁয়ে যায়, হৃদয় ভরে যায়। আর এই জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে আমরা খুঁজে পাই আমাদের অস্তিত্বের সন্ধান, জাগ্রত করে দেশ প্রেম। দেশ ও এদেশের মানুষকে ভালোবাসার আবেগ ও অনুভূতি জেগে উঠে মনে ও প্রাণে। সেই প্রাণ ছোঁয়া সঙ্গীত নিয়ে চলছে ষড়যন্ত্র। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না, মেনে নেওয়া যায় না। যারা এই ষড়যন্ত্রের বিজ বপন করেছে ধিক তাদের প্রতি। তাদের এই ধরনের উদ্যোগকে প্রতিবাদ করি, ঘৃণা জানাই। আসুন সম্মিলিত কণ্ঠের প্রতিবাদে জেগে উঠি সবাই। জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে এই ষড়যন্ত্রের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। আর সেটা করতে ছাত্র সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। কারণ দেশের প্রতিটি কল্যাণ কাজে ছাত্ররই এগিয়ে আসেন ও বিজয়ী হন।

এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে সেটা আশা করি না। এই প্রতিবাদে ছাত্র সমাজ এগিয়ে আসলে তা হবে জোরদার ও শক্তিশালী। তখন ষড়যন্ত্রকারীরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেবে না। এই ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে নিবৃত থাকবে। গত মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তনের দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও। বাহাত্তরের সংবিধান ‘বৈধ নয়’ মন্তব্য করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করারও দাবি জানান সেনাবাহিনীর সাবেক এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। এর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল প্রতিবাদ জানান অনেকে। এরই প্রেক্ষিতে সম্মিলিত কণ্ঠে এই জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে উদীচী।

শুক্রবার সকালে দেশের সব জেলা ও বিদেশে উদীচীর শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ একসঙ্গে এই জাতীয় সংগীত কর্মসূচি পালন করেছে বলেও জানায় সংগঠনটি। আমাদের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত রক্ষায় ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে সেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ। গতকাল শুক্রবার সূচনা করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এনিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত পাশের সড়কে একসঙ্গে একযোগে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার কর্মসূচি পালন করেছে তারা। জাতীয় সংগীত কণ্ঠে তুলে কর্মসূচিতে অংশ নেয় উদীচী, জাতীয় খেলাঘর আসরসহ বিভিন্ন সংগঠন। ব্যক্তিগতভাবেও কেউ কেউ অংশ নেন এই আয়োজনে। সাধুবাদ জানাই এই মহতি উদ্যোগকে। এভাবে সর্বস্তরের জনতাকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিরোধে গর্জে উঠতে হবে আরেকবার।

ঢাকায় কেন্দ্রীয় আয়োজনে সূচনা বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। পরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন সবাই। এসময় সাধারণ মানুষও শিল্পীদের সঙ্গে জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয়।

শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে একে একে গেয়ে শোনান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা জোগানো দেশাত্ববোধক গান ‘মাগো ভাবনা কেন’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে গানগুলো। সবশেষে আবারও জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, ‘আমরা দায়বদ্ধ মানুষের প্রতি। আমাদের অর্জন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখনই কোনো আঘাত আসবে, আমরা তার প্রতিবাদ করব। আমাদের জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা কারো দানে পাওয়া নয়। লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া এ আমাদের অর্জন। এই অর্জনকে কোনোভাবেই কলঙ্কিত করা যাবে না। যখনই কেউ মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীতে আঘাত করবে। আমরা তার প্রতিবাদ করবই।’

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘প্রগতিশীল সব আন্দোলন-সংগ্রামে উদীচী সামনে থেকেছে। যখনই দেশের ওপর, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর আঘাত এসেছেÑ আমরা প্রতিবাদ করেছি। এবারও জাতীয় সংগীত গেয়ে এই কর্মসূচি, সেই ধারাবাহিক প্রতিবাদেরই অংশ।’

উদীচী লিখিত বক্তব্যে জানায়, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতসহ এদেশের আপামর জনসাধারণের প্রাণের সব বিষয় নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র দেখা যাচ্ছে।

গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, একটি ধর্মান্ধ স্বার্থান্বেষীগোষ্ঠী ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মূল সুরকে বিকৃত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বিরোধিতা করা থেকে শুরু করে জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকার ওপর আঘাত হানতে শুরু করেছে।

এই হীন চক্রান্তের প্রতিবাদ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের রুখে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় দেশের সর্বত্র একযোগে উন্মুক্ত স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

মনে রাখতে হবে জাতীয় সঙ্গীত আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক। এনিয়ে ষড়যন্ত্র বাঙালির দেশপ্রেম, ভাষা, আবেগ ও অনুভতির ওপর আঘাত এসেছে। কাজেই বিষয়টি খাটো করে দেখা কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না। এখনি সময় এসেছে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদে গর্জে উঠার। আসুন, উদীচীর মতো সবাই কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে গর্জে উঠি। প্রতিবাদ করি, প্রতিরোধে গেয়ে উঠি আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version